কর্পোরেটের হাত থেকে গণমাধ্যমকে মুক্ত করো

আগস্ট ৫, ২০১৫

Akotaঢাকা জার্নাল: সাপ্তাহিক একতা’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, নামে গণমাধ্যম হলেও বর্তমানে প্রচলিত সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক ও টিভি মিডিয়াগুলো কর্পোরেটের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এসব মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন খবর থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম রক্ষায় ‘রক্ষাকবচের’ ভূমিকাই পালন করে, যা আদতে জনগণের ক্ষতির কারণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গণমাধ্যম এখন গণের পক্ষে অবস্থান না করে বিপক্ষে অবস্থান করছে। এ অবস্থা বদলাতে হবে। গণমাধ্যমকে কর্পোরেটের আজ্ঞাবহ অবস্থান বদলে মানুষের গণমুক্তির পক্ষে অবস্থান নিতে হবে।

মঙ্গলবার সকালে মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে সাপ্তাহিক একতা’র ‘গণমাধ্যম ও গণমুক্তি’ শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সাপ্তাহিক একতা’র সম্পাদক অধ্যাপক এ এন রাশেদার সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সিপিবি’র উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা জসিমউদ্দিন ম-ল, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাসদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, প্রেস কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষী চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আহমেদ অটল, রাশেদ মেহেদী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি কাফী রতন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক রাহুল রাহা ও নিখিল ভদ্র। একতা’র পক্ষে সেমিনারটি পরিচালনা করেন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক আশীষ কুমার দে।

প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে সাপ্তাহিক একতার ধারাবাহিক অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, প্রচলিত মিডিয়াগুলো এখন সংবাদকে ‘বিক্রিযোগ্য পণ্য’ মনে করে। মিডিয়াকে ম্যাস মিডিয়াতে পরিবর্তন করতে হলে এ ধারণার পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পাশাপাশি ‘সাংবাদিকের স্বাধীনতা’র আন্দোলনও জোরদার করতে হবে।

সেমিনারে সিপিবি’র উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা জসিমউদ্দিন ম-ল বলেন, কাগজ দুই ধরনের। ছোট লোকদের ও বড় লোকদের। এই কাগজ একতা হচ্ছে ছোট লোকদের। একতা হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর পত্রিকা। একতা তার জন্মলগ্ন থেকে আপোষহীন শোষন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। লাঞ্চিত নিপীড়িত জনতার মুখপত্র একতা।

পিআইবি-র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর বলেন, সাংবাদিকতার অন্যতম মূল বিষয়বস্তু হলো সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও চ্যালেঞ্জ। সাংবাদিকদের সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা এখন বিজ্ঞাপনদাতাদের অর্থের কাছে হেরে যায়। গণমুক্তির কথা এখন আর সামনে আসে না। কাগজ বিকানোর কৌশল হিসাবেই মাঝে মাঝে গণমানুষের কথা এখনকার সংবাদ মাধ্যমে আসে। একতাকেই গণমানুষের পত্রিকা হয়ে উঠতে হবে।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, একতার সাথে সম্পর্কটি অত্যন্ত আবেগের। একতার নামটি সাদামাটা, কিন্তু এর যাত্রাপথ খুব সহজ ছিল না। একতার ধারাবাহিক পথ চলা বিভিন্ন সময়ই বিঘিœত হয়েছে। একতার প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়েছে, অফিসে তালা দেয়া হয়েছে কারণ এর নাম নয় এর লক্ষ্য। এর লক্ষ্য শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তি। লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে একতাই প্রথম প্রতিবাদের ঝা-া তুলে ধরেছে। মহামতি লেনিন বলেছেন, সংবাদপত্র প্রচারক ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করে। বিগত ৪৪ বছর ধরে একতা সেই ভূমিকাই পালন করে আসছে।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, একতা হলো প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক চেতনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে অতি অল্পসংখক কাগজ ধারণ করে তার মধ্যে একতা অন্যতম। একতা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তা, ধর্মনিরপেক্ষতা চেতনার পক্ষে অবিচল লড়াই করছে। একতা পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবিচল রয়েছে। জাতীয় সম্পদ রক্ষার আপোষহীন সৈনিক একতা।

বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, একতা বৈষম্য পীড়িতদের একত্রিত করতে চায়। বৈষ্যমের কারণ শোষণ। শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একতা শুধু টিকেই নেই, অবিরত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ এন রাশেদা একতা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, মেহনতি মানুষের সত্যিকারের মূখপত্র হয়ে ওঠার যে নিরন্তর চেষ্টা একতা চালিয়ে যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে তা আরও বেগবান হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ৪, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.