momtaঢাকা জার্নাল: মুখ্যমন্ত্রীর ৯৮তম প্রশাসনিক বৈঠকে গুরুত্ব পেল গরু। কেন গরু পাচার কমছে না, তাই নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু তাতে গরু পাচার রোখায় গতি আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। পুলিশের অন্দরের খবর, দিন কয়েক আগে বহরমপুরে এসে শাসক দলের প্রথম সারির এক যুবনেতা হোটেলে তলব করেছিলেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাকে। দলের অন্দরের খবর, সে রাতে ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠকে সীমান্তের এক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করার নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে ওই পুলিশ কর্তাকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, গরু পাচার নিয়ে পুলিশের ‘অতিসক্রিয়’ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

জেলা পুলিশের খবর, যুব নেতার সেই বার্তা রাতারাতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সীমান্তের থানাগুলিতে। সপ্তাহ ঘোরেনি, বুধবার বিলকুল উল্টো ইঙ্গিত এল প্রশাসনিক বৈঠক থেকে। কী করে?

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ দিন বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে মুখ্যমন্ত্রীই গরু পাচারের বিষয়টি তোলেন। তাঁর নির্দেশে এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি বলতে শুরু করেছিলেন, ২০১৩ সালের তুলনায় গরু পাচার কমলেও,  সীমান্ত এলাকায় পাচারের প্রবণতা ফের উধ্বর্মুখী।

প্রশাসনিক একটি সূত্র বলছে, এই সময়ে সভার হাল ধরেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘‘পাচার একটু বেড়েছে তা আমি জানি। সেটা বন্ধ করতে হবে।’’ পুলিশ কর্তার দেওয়া পরিসংখ্যানের পাল্টা  মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তুলে দিয়েছিলেন পাচারের সংখ্যা। এক জেলা কর্তা বলছেন, ‘‘দুই পরিসংখ্যানের মধ্যে যথেষ্ট গরমিল ছিল। পুলিশকর্তার হিসেবে পাচার হচ্ছে বেশি।’’

ডিজি বলেন, মালদহে অবস্থিত সীমান্ত এলাকায় সিআইডি-র একটি স্পেশাল টিম এখন থেকে পাচারের উপরে নজর রাখবে। তিনি বলেন, ‘‘সিআইডি-র ওই টিম বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে পাচার হচ্ছে কি না দেখবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মেয়ে পাচার এবং জাল নোটের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।

তবে, পাচারের বিষয়ে যিনি মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ করেছেন,  রঘুনাথগঞ্জের সেই কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামান অবশ্য পাচার সংক্রান্ত ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘সক্রিয়’ ভূমিকাকে নিছকই ‘লোক দেখানো নাটক’ বলে মনে করছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দশক ধরে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত বরাবর গরু পাচার হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী সব জেনেও এত দিন চুপ করে ছিলেন।’’

অভিযোগ নতুন নয়। দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা হুমায়ুন কবীর কিছু দিন ধরেই জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার নালিশ জানিয়ে আসছেন। সেই তালিকায় জেলা তৃণমূলের কিছু পদাধিকারীর সঙ্গেই তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন দলের প্রাক্তন জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের বিরুদ্ধেও। দলনেত্রীর সহানুভূতি সঙ্গে থাকায় দল অবশ্য ইন্দ্রনীলের সঙ্গেই ছিল।

জঙ্গিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মহম্মদ সোহরাব বলেন, ‘‘জঙ্গিপুর ও সুতির বিভিন্ন এলাকা দিয়ে রোজ  হাজার হাজার গরু পাচার হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রশ্রয় ছাড়া এ ভাবে গরু পাচার হতে পারে?’’ তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই ধমক কতটা আন্তরিক ও কাজের তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বোঝা যাবে।

খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২, ২০১৫