বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাই

জুন ২৩, ২০১৫

Shrea Goshal 2ঢাকা জার্নাল: রবার বাংলাদেশে ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করে ঢাকার দর্শকদের গানে মাতিয়ে মুম্বাই ফিরে গেলেন ভারতের জনপ্রিয় ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল। বসুন্ধরা কনভেনশান সেন্টারে শ্রেয়ার অনুষ্ঠান উপভোগ করে এসে লিখেছেন মিতুল আহমেদ।

ঢাকার শ্রোতাদের গানের সুরে মাতিয়ে দিতে ‘বে এন্টারটেইনমেন্ট’-এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ আসেন শ্রেয়া ঘোষাল। দুপুর প্রায় একটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছুলেও বসুন্ধরা কনভেনশনের নবরাত্রি হলে আসেন সোয়া সাতটার দিকে। আর মঞ্চে উঠেন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। উঠেই উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্য শ্রেয়া বলেন, ‘কেমন আছেন সবাই? আজ কিন্তু অনেকগুলো পছন্দের গান করবো, অনেক সময় ধরে গান করবো; আছেনতো সবাই আমার সাথে..?’ উপস্থিত দর্শকরা শ্রেয়ার এমন কথায় অনেক সময় ধরে তার সাথে থাকার পণ করলো। সত্যি সত্যিই টানা তিন ঘন্টা গভীর মনযোগে গান শুনলো ঢাকার দর্শক।

Shrea Goshalকিন্তু তখনো নবরাত্রি হলের বাইরে অপেক্ষমান প্রচুর দর্শক। না, তাদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। হয়তো তাদের নেই ১০০০০, ৫০০০ বা ৩৫০০ টাকা দিয়ে নবরাত্রি হলে প্রবেশ করে গান শুনার সক্ষমতা; তবুও তারা এখানে এসেছেন শ্রেয়ার পরম ভক্ত কিংবা অনুরাগী বলে। বাহির থেকেই হয়তো প্রিয় শিল্পীর সুরেলা কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হতে চাইছেন তারা। অন্যদিকে হলের ভিতরে একেরপর এক শ্রেয়া ঘোষাল গেয়ে চলেছেন তার জনপ্রিয় গানগুলো।

একের পর এক গাইতে থাকলেন ‘সাসো মে তেরি’, আশিকি-২ এর সেই বিখ্যাত গান, ‘যাদু হে নেশা হে’, ‘তুহি তো মেরি, ক্যাইসে মে তুমিল গায়ে’র মতো সব দর্শক নন্দিত গানগুলো।

প্রতিটা গানের পর থামেন শ্রেয়া, এবং গানটির বিশেষত্ব সম্পর্কে দর্শকদের বলেন। কোন গানটি ক্যারিয়ারে সেরা, কোনটি তার প্রিয়, বা ভারতজুড়ে কোন গানটি দর্শক নন্দিত, কিংবা দেশের বাইরে গেলে কোন গানটি মানুষের পছন্দ এইসব বলতে বলতে তিনি ফের গানে ডুবে যান। যেরকম ‘আগারতুম মিলযাও, জামানা ছোড় দিঙ্গে হাম…’ গানটিকে শ্রেয়া বলছেন ক্যারিয়ারের সেরা গানগুলোর একটি।

তারপর গাইলেন তুমুল জনপ্রিয় গান ‘তেরে লিয়ে’, জাব উই মিট ছবির অসাধারণ একটি গান’ইয়ে ইশকে হায়ে’।
Shrea Goshal 1এর মাঝখানে আবার ডুয়েল গানের জন্যে সাথে নিয়ে আসা রিকেশ নামের আরেকজন শিল্পীকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে আসলেন শ্রেয়া। ভরাট পুরুষালি কণ্ঠে রিকেশও দেখিয়ে দিলেন তিনি কোনো অংশে কম যান না। যেহেতু তিনি মস্ত তারকার সাথে এসেছেন, ফলে নবরাত্রিহলে সেই তারার আলোয় তার কণ্ঠ প্রতিভা ঢাকাই পড়ে রইলো।

এতো ধুপধাপ গান হচ্ছে, মিউজিক কতো শক্তিশালি, অথচ দর্শকদের দেখে মনে হচ্ছে তারা কোনো শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠানে বসে আছেন, সংগীত শেষ হলে শুধু তাদের দায়িত্ব দু’হাত মিশিয়ে একটা ফর্মাল তালি! যা না দিলেই নয়। দর্শক মাতাতে শ্রেয়া চেষ্টা করলেন অনেক, কিন্তু এতো উৎসাহ দর্শকের কোনো কারণে কমই ছিলো।

ভিডিও দেখতে ক্লি করুন-


কিন্তু এর পরেই রামলীলায় জমিয়ে তুলেন পুরো অনুষ্ঠানটি, এতোক্ষণ প্রায় চুপ করে থাকা উপস্থিত মানুষের হুঁশ আসে। তারা শ্রেয়ার ‘ঢোল বাজে, ঢোল বাজে…’ তালের সাথেমাথা নাড়াতে থাকে!

রামলীলা দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের যখনকিঞ্চিৎ উষ্ণতা ছড়াতে পারলেন শ্রেয়া, ঠিক সেই মুহূর্তেসোয়া ন’টার দিকে গান থামিয়ে হঠাৎ মঞ্চে প্রবেশ করলেন উপস্থাপিকাও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদ। গান থামিয়ে হঠাৎ মঞ্চে প্রবেশের জন্য শ্রেয়া ঘোষালের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন, এবং জানালেন মঞ্চে আসছেন পরিবেশক ‘বে এন্টারটেইনমেন্ট’ এর কর্ণধারসহসহযোগি পৃষ্ঠপোষকরা।

আপন ও পূরবী জুয়েলার্স থেকে উপহারদেয়া হলোশ্রেয়াকে। এবার রেফল ড্র’র কথা বললেন মুনমুন আহমেদ।শ্রেয়া ঘোষাল মঞ্চেরপেছনে চলে গেলেন। আর মঞ্চে রেফল ড্রসহবিভিন্ন পণ্যের বাণিজ্যিক প্রচার করলেন, তাদের বিভিন্ন পণ্যের উপর ছাড়ের কথা বললেন।

এশিয়া টিভির ব্যবস্থাপনা কমেটির একজন উঠে সামান্য বিনোদনও দিলেন দর্শকদের। দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে দেয়া হলে তিনি বলেন, আপনাদের দোয়া থাকলে আমরা এশিয়া টিভি ও রেডিও প্রতি মাসে এরকম একটি আয়োজন করতে চাই। এবং তিনি তার বক্তৃতার শেষে মুখ ফস্কে বলে ফেলেন, ‘জয় বাংলাদেশ, জয় ভারত’। তার এমন কথার পর উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে হাসির রুল পড়ে যায়।

একটু পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হলো ‘বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বিরতি’র। দর্শকরা এবার উঠতে শুরু করলো, অধিকাংশ বাহির থেকে ঘুরে আসলো। এই ফাঁকে মঞ্চে উঠলেন শ্রেয়ার সাথে আসা রিকেশ। তিনি কিশোর কুমারের প্রতি শ্রদ্ধ জানিয়ে গাইলেন একটি গান, গাইলেন ‘আশিকি-২’-এর তুম হি হো গানটি। এতা চমৎকার গাইছে, তবুও দর্শকের নূন্যতম ছুয়ে যাচ্ছে না। দর্শকের চোখ অন্যদিকে। তারা খুঁজছে ‘শ্রেয়া ঘোষাল নাইট’-এর মধ্যমনিকে।

হ্যাঁ, রিকেশের গান শেষ হতেইবিরতির পর ফের মঞ্চে আসলেন শ্রেয়া,সাথে করে নিয়ে আসলেন ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মিষ্টি প্রেমের গান ‘জুবি ডুবি জুবি ডুবি’! মোটামুটি মাতলেন ঢাকার দর্শক, একটু দম নিয়ে গাইলেন ‘ও রামা’; ইনস্ট্রুমেন্টের এতো জাঁজ ছিলো যে মধ্য বয়সী লোকটাকেও মাথা নাড়াতে দেখা গেলো। এটা শেষ হতেই ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো অতি পরিচিত নারী কণ্ঠেরবুক দুরু দুরু করা দীর্ঘশ্বাস, আর ইরোটিক শব্দ ‘আহ, ওহ্’! বুঝতে বাকি রইলো না কারো এটা যে পর্দায় দেখা ‘ডার্টি পিকচার’-এর বিদ্যা বালানের ঠোঁটে শ্রেয়ার গান ‘ওলালা ওলালা…তুহি মেরি ফ্যান্টাসি…’। দর্শকের এবার আরো একটু জমে উঠলো। শ্রেয়ার সাথে সাথে তারাও গাইতে থাকলো ওলা লা ওলা লা…।

তবে দর্শকদেরসবথেকে বেশী মাতিয়ে গেলো’চিকনি চামেলি’গানটা।কারণ এই গানটা শ্রেয়া মুখ দিয়ে শুধু গাইলেন না, সাথে চিকনি চামেলি স্টাইলে গানের সাথে নাচও করলেন।চিকিনি চামেলিতে যতোটা উন্মাদনা ছিলো, যতোটা জোর ছিলো গানে এর পরের গানেই শ্রেয়া নেমে এলেন লিরিক প্রধান গানে। গাইলেন তার বিখ্যাত গান ‘তেরি মেরি প্রেম কাহিনী….’। গানটির পর সালমানের এক ভক্ত দাঁড়িয়ে গেলেন, বললেন ফের গাইতে গানটা।শ্রেয়া বাংলাদেশে সালমানের এমন ভক্ত দেখে ভূয়সি প্রশংসা করলেন। করলেন সালমানেরও গুনগান।ওই দর্শকের কথাও রাখলেন শ্রেয়া। মিউজিক ছাড়াই ফের গাইলেন বডিগার্ড ছবির জনপ্রিয় গান ‘তেরি মেরি প্রেম কাহানি’।

খুব বিনিতভাবে ঢাকার গানের প্রশংসা করলেন। এবং গাইলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার গান ‘সাগর কুলের নাইয়া রে; এবং গাইলেন ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বইরাগি’।

গান থামিয়ে ফের কথায় ফিরে গেলেন, এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। তিনি বললেন, ‘আমি বারবার ফিরে আসতে চাই বাংলাদেশে, এখানের খাবার, ওহ’! ইলিশ মাছের স্বাদের কথা বললেন, সবাই যেরকম বাংলাদেশে এসে বলে!ভিনদেশি মানুষের কাছ থেকে নিজের দেশের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে, তাই নিজের দেশের প্রশংসা শ্রেয়ার কাছ থেকে শুনে দর্শকেরও তুমুল কড়তালি পড়ে।

ফের গানে ফিরে গেলেন, দরদীমাখা কণ্ঠে গাইলেন ‘রাব্ নে বানাদে যদি’, তেরি ও তেরি ও হায় রাব্বার মতোন জনপ্রিয় হিন্দি গানগুলো।

মঞ্চে আছেন শ্রেয়া, গাইছেন টানা তিন ঘন্টা; অথচ ক্লাসিকেল গাইবেন না তাতো হয় না! ফলে শেষমেষ ক্লাসিক গেয়ে ষোলকলা পূর্ণ করলেন শ্রেয়া ঘোষাল।লতা মুঙ্গেসকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গাইলেন আমি যে তোমার।

গান যখন শেষ করলেন তখন ঘড়িতে পেন এগারো!মঞ্চ ত্যাগের আগে বলে গেলেন, থ্যাঙ্ক ইউ বাংলাদেশ, আমি আবার ফেরৎ আসবো!

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.