ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

জুন ২২, ২০১৫

bd_winঢাকা জার্নাল : অনেক অবহেলার গল্প আছে। আছে অনেক ক্ষোভের গল্পও। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্রিকেট-কর্তারা বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কিংবা ওয়ানডে খেলার মান নিয়ে যতোটা না তাচ্ছিল্য করেছিলেন, তার চেয়ে বেশি তিরস্কার-বিদ্রুপ-ব্যঙ্গ করেছিলেন ‘তারা’। ‘অর্ডিনারি’, ‘মিনোজ’, ‘আন্ডারডগ’- বাংলাদেশের সঙ্গে এমন বিশেষণগুলো বারবার ‍আওড়ে না খেলার দাম্ভিক ইঙ্গিতও দেখাতেন। গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রকাশ্য জালিয়াতি করে জেতার পর এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে সেসব নিয়েও তাচ্ছিল্য করেছেন ‘তারা’।

সেইসব অবহেলা-বিদ্রুপ-তাচ্ছিল্যের গল্পের শেষ লেখা শুরু হয়েছে। অবশেষে সেই ‘তাদের’ও মাটিতে নামিয়ে আনলো টিম বাংলাদেশ। কাগুজে ‘বড় ভাই’ সেই ভারতকে দ্বিতীয় ম্যাচেও নাস্তানাবুদ করলো টাইগাররা। এর মাধ্যমে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করলো বাংলাদেশ। দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো এ সিরিজ জয়ের পর এখন ‘বাংলাওয়াশ’-এর দিকে তাকিয়ে টাইগার ক্রিকেটাররা। ভারতের বিপক্ষে টানা এ দু’জয়ের ফলে ৠাংকিংয়ের প্রথম আটটি দল হিসেবে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত হয়ে গেলো বাংলাদেশের।

১৮ জুন প্রথম ম্যাচে জয়ের পর রোববারের (২১ জুন) দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে টাইগারদের দরকার ছিল ২০০ রান। ৪৭ ওভারে এ রান সংগ্রহ করতে হতো বাংলাদেশকে। তবে, বেঁধে দেওয়া ওভারের অনেক আগেই অর্থাৎ ৩৮ ওভার খেলে ৫৪ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। সিরিজ নিশ্চিত করা ম্যাচটিতে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের জয় ৬ উইকেটের।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে উদ্বোধন করতে নামেন আগের ম্যচের সফল জুটি তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দলীয় ৩৪ রানের মাথায় টাইগাররা তাদের প্রথম উইকেট হারায়। ব্যক্তিগত ১৩ রানে ধাওয়াল কুলকার্নির বলে শিখর ধাওয়ানের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল।

দলীয় ৩৪ রানের মাথায় টাইগারদের ওপেনার তামিম ফিরে গেলেও দলকে দারুণ ভাবে এগিয়ে নিতে থাকেন সৌম্য সরকার। তবে, ১৭তম ওভারে অশ্বিনের একটি নিচু হওয়া বলে এলবি’র ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন সৌম্য। আউট হওয়ার আগে তিনি ব্যক্তিগত ৩৪ রান করেন। লিটনের সঙ্গে ৫২ রানের জুটিও গড়েন ৪৭ বল মোকাবেলা করে দুটি চার আর একটি ছক্কা হাঁকানো সৌম্য।

এরপর বেশি সময় থাকতে পারেননি লিটন কুমার। ব্যক্তিগত ৩৬ রান করে আকসার প্যাটেলের বলে উইকেটের পেছনে ধোনির গ্লাভসবন্দি হন তিনি। আউট হওয়ার আগে লিটন ৪১ বল মোকাবেলা করে ৫টি চার হাঁকান।

তামিম, সৌম্য আর লিটন কুমার ফিরে গেলেও টাইগারদের রানের চাকা সচল রাখেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। তবে, ইনিংসের ৩০তম ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক। ৩৪ বলে তিনটি চার আর একটি ছয়ে ৩১ রান করেন মুশফিক।

সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর সাব্বির করেন অপরাজিত ২২ রান।

এর আগে অভিষেক ম্যাচেই বাজিমাত করা টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তুলে নেন ৬টি উইকেট। ভারতের কাছে ‘আননোন ফ্যাক্টর’ মুস্তাফিজের পেসে বিধ্বস্ত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ। ৪৫ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা সফরকারীরা ২০০ রান সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৪৭ ওভারে ২০০ রান (ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে)।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। টাইগারদের বোলিং সূচনা করতে আসেন টাইগারদের বোলিং চমক মুস্তাফিজুর রহমান। আর ভারতের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে আসেন রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান।

আগের দিন কাউন্টার অ্যাটাকের তত্ত্ব দিয়ে ম্যাচে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। তরুণ তুর্কি মুস্তাফিজুর রহমানের বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। প্রথম ওয়ানডেতেও রোহিত মুস্তাফিজের বলে দিশেহারা হয়ে সাজঘরে ফেরত গিয়েছিলেন।

সফরকারীরা রোহিত শর্মার উইকেটটি হারিয়ে বেশ সতর্ক থেকে ব্যাট করে চলছিল। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান এবং বিরাট কোহলি দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অবশেষে নাসিরের বলে পরাস্ত হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন কোহলি। নাসিরের বলে এলবির ফাঁদে পড়ার আগে কোহলি করেন ২৩ রান। আউট হওয়ার আগে কোহলি-ধাওয়ান ৭৪ রানের জুটি গড়েন।

নাসিরের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাশের গ্লাভসবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে থাকা শিখর ধাওয়ান (৫৩)। আউট হওয়ার আগে তিনি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতকের দেখা পান। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে রানের খাতা না খুলেই সাজঘরে ফেরেন আম্বাতি রাইডু। রুবেল হোসেনের বলে নাসিরের ক্যাচে পরিণত হন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

দলীয় ৩৬তম ওভারে মাশরাফি আবারো বল তুলে দেন মুস্তাফিজের হাতে। নতুন স্পেলে এসেই টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে মুস্তাফিজের আঘাত। টাইগারদের বোলিং চমকের শিকারে সাজঘরে ফেরেন সুরেশ রায়না। মুস্তাফিজের লাফিয়ে উঠা বলে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি হয়ে ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে আউট হন রায়না। আউট হওয়ার আগে ধোনির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৫৩ রানের একটি জুটি গড়েন রায়না।

গত ম্যাচে ধোনির ধাক্কায় মাঠের বাইরে গিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে এই মুস্তাফিজই টিম ইন্ডিয়াকে বড় একটি ধাক্কা দিয়ে হারিয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার ভক্তদের মন ভরিয়ে ধোনিকে দারুণ এক স্লোয়ারে কাবু করেন মুস্তাফিজ। একই ওভারে পরের বলেই আকসার প্যাটেলকে এলবির ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজ। এরপর নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নিতে

সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হওয়ার আগে ধোনি করেন ৪৭ রান। আকসার প্যাটেল শূন্য আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৪ রান করে মুস্তাফিজের শিকারে সাজঘরে ফেরেন।

বৃষ্টির পর নেমেই জাদেজাকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান মুস্তাফিজ। আর এর মধ্যে দিয়েই ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। ভারতের শেষ উইকেটটি নেন রুবেল হোসেন।

মুস্তাফিজ ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৬টি, নাসির ১০ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২টি আর রুবেল ৭ ওভারে ২৬ রান দিয়ে বাকি ২টি উইকেট তুলে নেন।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে মাঠে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলে কোনো পরিবর্তন ছিল না। প্রথম ওয়ানডের দলটিই রেখে দিয়েছেন নির্বাচকরা। তবে, ভারতের একাদশ থেকে ছিটকে পড়েন আজিঙ্কা রাহানে, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা। তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পান আম্বাতি রাইডু, আকসার প্যাটেল ও ধাওয়াল কুলকার্নি।

সিরিজ জয়ের পর বরাবরের মতো টাইগার সমর্থকরা এখন তাকিয়ে আছে সফরকারীদের ‘বাংলাওয়াশ’র দিকে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, ২১ জুন ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.