বাজপেয়ীর সম্মাননা মোদির হাতে তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি

জুন ৭, ২০১৫

Modi_Hasinaঢাকা জার্নাল: সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে বাংলাদেশ সরকারের তরফে দেয়া ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

রোববার দুপুরে বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্মাননা তুলে দেয়ার সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সম্মাননা আপনার (মোদি) তুলে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আরও বেশি আনন্দিত হতাম যদি তিনি (বাজপেয়ী) নিজেই এই সম্মাননা গ্রহণ করতে পারতেন।

বাজপেয়ীর পক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি এ সম্মাননা গ্রহণ করায় আমরা (বাংলাদেশ) সম্মানিত বোধ করছি।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সময় ভারতের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে এবং পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভূমিকা বাংলাদেশ ভুলবে না বলে এ সময় উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

এছাড়া ভারতের মত একটি বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির প্রজ্ঞা এবং সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি গত বছরের ভারত সফরের সময় মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাতের স্মৃতিচারণও করেন রাষ্ট্রপতি।

সবশেষে নিজের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় নিহত সকল ভারতীয় সেনাকে সম্মননা দেয়া হবে বলেও এ সময় ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররেফ হোসেন ভূইয়ার সঞ্চালনায় ‍অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সহ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।

রোববার (৭ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল সোনারগাঁও থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হন মোদি । দুপুর পৌনে একটার দিকে বঙ্গভবনে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

বাজপেয়ীর সম্মাননা গ্রহণের পর এখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া রাষ্ট্রপতির বিশেষ মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিচ্ছেন মোদি।

এর আগে বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে সকালে পৌনে ৯টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনের মাধ্যমে দিনে কর্মসূচি শুরু করেন মোদি। ঢাকেশ্বরীতে মিনিট দশেক পূজা-অর্চনা করে রামকৃষ্ণ মিশনের দিকে রওয়ানা হন তিনি।

৯টা ০৭ মিনিটে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পরিদর্শনে পৌঁছে সেখানে প্রার্থনা করেন মোদি। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থানের পর মিশন ও মঠ ছেড়ে বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসের উদ্দেশে রওয়ানা হন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

দূতাবাসে পৌঁছে মোদি একটি বকুল চারা রোপণ করেন। এরপর তিনি দূতাবাসের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে তার সরকারের ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং সরকারকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেন।

দূতাবাসের কর্মসূচি শেষে মোদি হোটেল সোনারগাঁওয়ে ফিরে যান।

বঙ্গভবনে মধ্যাহ্নভোজের পর আবারও হোটেলে ফিরবেন মোদি। সেখানে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৩টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি। তারপর একে একে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হোটেল সোনারগাঁওয়ে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।

সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বক্তৃতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পরপরই তিনি নিজ দেশে ফেরার উদ্দেশে যাবেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

সেখানে রাত ৮টা ১০ মিনিটে ভিভিআইপি টারমাকে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ৮টা ২০ মিনিটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ প্লেনে করে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির।

এর আগে, শনিবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার আগে ঢাকায় পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনার গ্রহণ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সাভারে চলে যান। সেখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি যান ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর মোদি হোটেল সোনারগাঁওয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ ক’টি বৈঠক করেন এবং যৌথ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

ঢাকা জার্নাল, জুন ০৭, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.