পালাচ্ছেন ‘মামু আতাউর’!

আগস্ট ১, ২০১৪

OC Ataurঢাকা জার্নাল: কেউ তার কক্ষে প্রবেশের আগেই খুলে রাখতেন টেবিলের ড্রয়ার। ড্রয়ারে ফাইলপত্র নয় ঢুকতো টাকা। টাকার বিনিময়ে হতো আসামি ধরা-ছাড়ার খেলা। কাউকে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া, রিমান্ডে আনা-নেওয়া সব কিছুর মাঝেই ছিলো ড্রয়ারের ব্যবহার। আর আসামি নির্যাতনের কোন মাত্রা বাকি রাখেননি ওসি ‘মামু’ আতাউর।

টাকার লোভী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠায় তিনি সিলেটে ‘মামু’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠছিলেন। পুরো নাম আতাউর রহমান বাবুল। যখন যে সরকার তখন তার লেবাস লাগিয়ে বাগিয়ে নেন পোস্টিং।

সেই ধারাবাহিকতায় কনেস্টবল থেকে থানার ওসিও তিনি। সিলেটেই একাধিক ফ্লাট বাড়ি কিনেছেন। অভিজাত বিপনী বিতান ‘আল হামরা’য় দখল করেছেন দোকান। গ্রামের বাড়ি খলাছড়া ইউনিয়নের ডিগ্রি গ্রামে ‘সুধার বাড়ি’ নামে পরিচিত ২০ একরের বাড়ি করেছেন। জকিগঞ্জ বাজারে স্বাদ মিষ্টি ভাণ্ডার দোকান খুলেছেন।

কোতোয়ালী ওসি থাকা অবস্থায় পিরেরচক গ্রামে একটি বাসা কিনেছেন তিনি। সম্প্রতি ৩ টি মৎস খামার গড়েছেন বাড়ির পাশে। সিলেটের উপশহর নিজের একটি বাড়ি আছে। তবে সেটি ভাড়া দেয়া। আত্মীয় স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে দুই কোটি টাকা রেখেছেন- এমনসব তথ্য এখন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

আর এ সবই হয়েছে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে সিলেটে যোগ দেন ওসি ‘মামু আতাউর’। ওই বছরের ৭ জুলাই নিজ জেলা সিলেট কোতোয়ালী থানায় পোস্টিং নিয়ে আসেন তিনি।

সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়রের ভাইকে থানায় ধরে এনে নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর বেকায়দায় পড়েছেন মামু আতাউর। এ ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্মমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওসি আতাউরের নির্যাতনের শিকার হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ছাতক পৌরমেয়রের ওই ভাইকে দেখতেও গেছেন তিনি।

এদিকে তার নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কোতোয়ালীর ওসি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মামলা রজ্জুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়ালি সে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেবে সিলেট মহানগর পুলিশ।

অন্যদিকে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে ওসি আতাউরকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। তবে এখনও সিলেটের নিজ বাড়ি জকিগঞ্জে অবস্থান করছেন তিনি।

সম্প্রতি জকিগঞ্জ উপজেলা ঘুরে তার ওসি হয়ে সম্পদ গড়ার তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার লোকজনও স্বস্তিতে থাকতে পারতেন না ওসি আতাউরের কারণে। নিজ এলাকার লোক ধরে এনে ছিনতাই চাঁদাবাজি মামলা দিতেন। কাউকে কাউকে ‘জামাত-শিবির’ নাম লাগিয়ে একের পর এক মামলা ঠুকে দিতেন।

বরখাস্ত হওয়ার খবর জেনেই তার এলাকার লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করেছে। ঈদের সময় অনেকটা ‘টক অব দ্য সিটি ছিলো ‘মামু আতাউরের’ নির্যাতন কাহিনী।
একই সঙ্গে এও জানা গেছে, এবার দেশ ছেড়েই পালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আতাউর।

আতাউরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, বিপদ বুঝে আর দেশে থাকছেন না আতাউর। যেকোন সময় লন্ডন পাড়ি জমাবেন তিনি। সেই বন্দোবস্ত আগেই করে রাখা ছিলো। গ্রেফতার এড়াতে গোপনে লন্ডন যেতে পাসপোর্ট ভিসা এখন তার দোরগোড়ায়। তবে তা খুব গোপনে।

ঘনিষ্ঠ সূত্রটি এও জানিয়েছে, ‘লন্ডন যেতে ব্যর্থ হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত যাবেন আতাউর। সেখানে তার মামার বাড়ি।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মিজানুর রহমান জানান, ‘ঈদের দিন পর্যন্ত সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন আতউর।

বিদেশে যাতে পালাতে না পারেন এজন্য বিমানবন্দর ও বন্দর স্টেশনগুলোতে নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, হাইকোর্টের অফিসিয়াল নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে মামলা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলে মামলা দেওয়া হবে।

এদিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি ওসি আতাউর রহমানকে। শুক্রবার সকালেও কয়েক দফা চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ওসি আতাউরের নাগাল।

সূত্র জানায়. সিলেট কোতোয়ালি থানায় ওসি আতাউরের যোগদানের পর থেকে কোতোয়ালি থানায় ঘটতে থাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।

জিন্দাবাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকায় সন্ধ্যা রাতে মার্কেটের দারোয়ানকে খুন করে স্বর্ণের দোকান লুট করা হয়। এ অবস্থায় আতাউরকে বদলি করা হয় মৌলভীবাজার সদর থানায়। কিন্তু সেখানে যোগদান না করে তদবির করে আবার ফিরে আসেন নিজ জেলার কোতয়ালী থানায়।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১, ২০১৪

লেখকক :
সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.