কলকাতায় মিস লাভলির জীবন যৌবন

জানুয়ারি ৩১, ২০১৪

11939809213_b974e62791_bবলিউড। স্বপ্ন-বাস্তবের আলো-আঁধারিতে মেশানো এক জগৎ। সাধারণের ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে। আপাত গ্ল্যামারের এই দুনিয়ার কিঞ্চিৎ সত্যিটা আমরা জানি। কিন্তু বাকিটা? নিকষ কালো। স্ক্রিপ্ট, পোর্টফোলিও আর ক্যামেরা হাতে বহু মানুষের বছরের স্বপ্ন সেখানেই থমকে থাকে, নতুন আগামীর অপেক্ষায়। হয়তো কাঠখড় পুড়িয়ে তৈরি হয় কিছু ছবি। বলিউডি ভাষায় সে ছবি বি বা সি গ্রেডের মর্যাদা পায়। এমনই সব ছবিতে থাকেন মিস লাভলি, সোনু দুগ্গলরা। আপামর বলিউড জানে, কী ভীষণভাবে বলিউডের কাহিনিতে এঁদের স্থান। এবার তাঁদের নিয়েই তৈরি হল অসীম আলুওয়ালিয়ার ‘মিস লাভলি’।

সম্প্রতি, এই শহরের এক পাঁচতারায় হাজির হলেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আর মিস লাভলি ওরফে নীহারিকা সিংহ। সঙ্গে ছিলেন ছবির প্রযোজক অসীম আলুওয়ালিয়াও!

নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আর নীহারিকা সিংহ-কে মুখ্য চরিত্রে রেখে এই ছবি অবশ্য ২০১২-তেই তৈরি হয়ে যায়। ভারতীয় সেন্সর আর ডিস্ট্রিবিউটরশিপের নানা টানাপোড়েনে ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। কিন্তু কান ফেস্টিভ্যাল থেকে শুরু করে টরন্টো ফেস্টিভ্যালে এই ছবির সুনামের পর, সেন্সর বোর্ড খানিক নরম হল। ফলে ছবি মুক্তি এবার আসন্ন। ছবিটি ২০১৩-এর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয়েছে। এবার ছবি মুক্তির সাংবাদিক বৈঠকে জানা গেল যে, ১৭ জানুয়ারি ছবিটি সারা ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।

এ ছবির গল্পে আছে দুগ্গল ব্রাদার্স নামে একটি প্রোডাকশন হাউস। বলিউডের সি বা বি গ্রেড ছবি বানায় তারা। প্রসঙ্গত, বি বা সি গ্রেড বলতে, মূলত চটচটে হরর বা পর্ন ফিল্ম বোঝানো হয় বলিউডি ভাষায়। এই দুগ্গল ব্রাদার্স ১৯৮০-এর দশকের মশলা, হরর, সেক্সসম্বলিত ছবি বানায়। ছোট ভাই সোনু দুগ্গল (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি) এবং বড় ভাই ভিকি (অনিল জর্জ) কীভাবে নিজের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখতে এই বলিউডে সি গ্রেড ছবির ওঠানামার আলোআঁধারিতে কর্মজীবন চালাচ্ছে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘মিস লাভলি’।

পাশাপাশি এদের চোখ দিয়ে, বলিউডে ক্যামেরার পিছনে থাকা কঠোর বাস্তবও এবার চলে আসবে দর্শকের চোখের সামনে। এমন জীবনেই হঠাৎ আসেন মিস লাভলি (নীহারিকা সিংহ)।

যিনি কখনও আইটেম, কখনও এই সি গ্রেড ছবিতেই জীবন-নির্বাহ করেন।

সব মিলিয়ে কোথাও একটা কি ছবিটাকে ‘ডার্টি পিকচার’ ঘরানার বলে মনে হচ্ছে? সাংবাদিক বৈঠকে বুদ্ধিমান পরিচালকের মুখে শোনা গেল তার জবাবদিহি! ‘আমি বলছি না যে, একেবারে নতুন বিষয় নিয়ে ছবি করেছি। এই বি বা সি গ্রেড ছবির জীবন নিয়ে বলিউডে সবাই সব জানে। কিন্তু তাদের কথা বলা হয় না। আমি সেই কথাই বলতে চেয়েছি। গত এক বছর ধরে ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে আমার রোম্যান্স না চললে, আরও আগেই মুক্তি পেত ছবি’, সহাস্যে জানালেন পরিচালক অসীম আলুওয়ালিয়া।

অন্যদিকে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া আর্থ নীহারিকা সিংহ, গ্ল্যামারের বাইরে অচেনা জগৎ নিয়ে এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে রীতিমতো আপ্লুত। ‘কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, আমি কত কিছু জানি না। সিনেমা মানে গ্ল্যামারটাই সব নয়। কঠোর বাস্তবটা খুব কঠিন। আমি শিখছি। আরও শিখব। যাঁরা আইটেম করেন বা সি গ্রেড ছবিতেই জীবন নির্বাহ করেন, তাঁদের আমার শ্রদ্ধা জানাই’, বলছেন নীহারিকা।

তা, মিস লাভলি যা-ই বলুন না কেন, এখনও এই ছবি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বেশ কিছু দৃশ্য এবং ডায়লগ, সেনসরের কাঁচিতে বাদ গেছে। তবু বাকি ইতিহাসটা দর্শকের মন জয় করতে পারে কিনা, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭ জানুয়ারি অবধি!

গুলশনারা, কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.