বিশ্বকাপের ফাঁদে শিশু যৌনকর্মীরা

ডিসেম্বর ৫, ২০১৩

Brazils_child_sex33080_0ঢাকা জার্নাল: বিশ্বকাপকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে ব্রাজিলে। আর এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের রমরমা অবস্থা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলছে নানা আয়োজন। কিন্তু বিশ্বকাপকে ঘিরে যা কিছু হচ্ছে তার সবই ইতিবাচক নয়। বিশ্বকাপ যৌন-পর্যটনের জন্যও কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার ফাঁদে পড়বে ব্রাজিলের শিশু যৌনকর্মীরা।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বকাপের সময় বেশ ঝুঁকির মুখেই থাকবে দেশটির শিশু যৌনকর্মীরা। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের শরীর বিকোনোর এই ক্লেদাক্ত পেশায় আসা রোধ করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু সেটা কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে তা একটা বড় প্রশ্ন হয়েই রয়ে গেছে।

বর্তমানে ব্রাজিলে বড় শহরগুলোতে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে যৌনকর্মী হিসেবে। কার্নিভাল বা নতুন বছরের উৎসবের মতো বড় অনুষ্ঠানের সময় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায় যৌনকর্মী হিসেবে শিশুদের উপস্থিতি। বিশ্বকাপের সময় যে এটা আরও বেড়ে যাবে সেটা ভালো মতোই আঁচ করতে পারছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা মেটানোর জন্য হয়তো অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে দেহ ব্যবসার পথে নিয়ে যাবে দালালেরা। বিষয়টি সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে জোসেলেনো ভিয়েইরা দস সান্তোসকে। যিনি কাজ করছেন শিশুদেরকে যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আয়োজক শহরগুলোতে শিশু যৌনকর্মীদের ব্যবহার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে যতটা সম্ভব এটা রোধ করার চেষ্টা করছি।’

কিন্তু ব্রাজিল সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় আছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ব্রাজিল শাখার নির্বাহী পরিচালক ডেনিস সিসারিও বলেছেন, ‘এই বিষয়টা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। আর শিশুদের যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করা থেকে বিরত রাখতে সরকারের কোনো সদিচ্ছাও আমাদের চোখে পড়ছে না।’

ব্রাজিল সরকার শিশুদের এ পেশায় আসা থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল প্রায় এক দশক আগে। কিন্তু পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং অবনতিই হয়েছে। ২০০১ সালে যেখানে শিশু যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিল এক লাখ, ২০১২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখে। এখন বিশ্বকাপ ঘিরে আবারও নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা যে সমস্যার মূলে পৌঁছাতে পারবে না তা ভালো মতোই বুঝতে পারছেন দস সান্তোস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে বিশ্বকাপের জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে সেটা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু আমরা আশা করছি এর মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা যাবে।’

এবারের বিশ্বকাপে ছয় লাখের মতো বিদেশি পর্যটক ব্রাজিলে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁরা ব্রাজিলীয় মুদ্রায় ২৫ বিলিয়নের মতো অর্থ খরচ করবেন ব্রাজিলে থাকাকালে (এক হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার)।

অর্থের এই ঝনঝনানি হোটেল-মোটেলগুলোকেও প্রলুব্ধ করবে অস্থায়ীভাবে যৌনকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া। এর পাশাপাশি পর্যটনের দেশ ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠিত পতিতালয়গুলো তো আছেই।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ৪, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.