আসছে সপ্তাহজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি

ডিসেম্বর ১, ২০১৩

abotaotÑ_32183ঢাকা জার্নাল: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শনিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের পর আগামী সপ্তাহজুড়ে একই কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, অব্যাহত আন্দোলন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশ অচল করে দিতে ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ঢাকার প্রবেশপথ ও মহাসড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন জোটনেতা বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে দলের যে কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং ফোনে যোগাযোগ করেছেন তাদের তিনি বলেছেন, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে হবে। আর মাঠ দখলে রাখলে ‘বিজয়’ নিশ্চিত হবেই।

জানা যায়, এবারের আন্দোলনের ধরন হবে ভিন্ন। সরকার যত শক্ত হবে, ১৮ দলের নেতাকর্মীরাও সে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছক অনুযায়ী কাজ করবেন। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, তা জীবন বাজি রেখে হলেও সফল করবেন বলে তৃণমূল নেতারা খালেদা জিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ছক অনুযায়ী দেশ অচল করতে স্থলপথের আন্তঃনগর, আন্তঃজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক স্থায়ীভাবে গাছের গুঁড়ি ফেলে বা প্রয়োজন হলে রাস্তা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি জেলার নেতারা নিজ নিজ ছক অনুযায়ী কাজ করছেন। রেলপথে যাতে কোনো ট্রেন চলাচল করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজন হলে সব সিগনাল বাতি, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ গুঁড়িয়ে দেওয়া হতে পারে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকানোর পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় পথে পথে ‘বাধা’ দিতে নতুন কর্মসূচি আসছে। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-রাজশাহীসহ মহাসড়কগুলোতে অবরোধ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে রেলপথেও অবরোধ সৃষ্টি করা হবে।

জানা যায়, খালেদা জিয়া এখন দলের সিনিয়র নেতা নয়, তৃণমূলের ওপরই নির্ভর করছেন। তাই কর্মসূচি দেওয়ার আগে তিনি এখন জেলা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচ্ছেন।

বিএনপি নীতি নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে যাত্রাবাহী বাসে আগুন দিয়ে মানুষ ‘হত্যা’ করার বিষয়টি পরিকল্পিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সরকার বিএনপিকে বেকাদায় ফেলার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে দলের হাইকমান্ড। তাই এবার আরো কঠোরভাবে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায়ও এবার মাঠে থাকবেন নেতাকর্মীরা। পুলিশ গুলি চালালে নেতাকর্মীদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘মানুষ মারার রাজনীতি আমরা করি না। এটি আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। অবরোধের ঠিক শেষ সময়ে এসে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে জেলার নেতারা পিছনে ফিরে না তাকানোর অনুরোধ করেছেন। আন্দোলন প্রশ্নে যে কর্মসূচিই দেন তা তারা সফল করে দেখাবেন। তৃণমূল  নেতাদের কথা অনুসারে মঙ্গলবার থেকে টানা ৭১ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে সফল হয়ে আবারো ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ৭১ ঘণ্টার অবরোধে রেল ও স্থলপথে সফল হলেও নৌপথ সচল ছিল। তাই এবার এ পথটিও একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মালিকদের আগামী আন্দোলন-কর্মসূচিতে লঞ্চ চালু না রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া জামায়াত-শিবির সূত্র জানিয়েছে, আগামী অবরোধে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে আগের চেয়েও কঠোর।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সফরে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তারা মনে করেন, দলের মহাসচিব ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থেকে আন্দোলন করতে পারেন না। এতে নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। দলের বেশ কয়েক সিনিয়র নেতা মির্জা ফখরুলের ‘পালিয়ে’ থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও মির্জা ফখরুল ওই নেতাদের বলছেন, কৌশলগত কারণে তিনি আত্মগোপনে আছেন।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.