মামুনুল-নর্দের জাদুতে সেমিতে শেখ জামাল

নভেম্বর ৩০, ২০১৩

 ফেডারেশন কাপ

ঢাকা জার্নাল : মামুনুলের সহায়তায় ও সনি নর্দের জাদুতে মোহামেডানকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল শেখ জামাল। মোহামেডানের রক্ষণভাগ চূর্ণ করে বারবার আক্রমণে গেলেও ৯০ মিনিট শেষে ৩-১ ব্যবধানের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ৯ কোটি টাকার এই ক্লাবকে।

খেলার প্রথম পাঁচ মিনিট মোহামেডানকে কোন সুযোগ না দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখে জামাল। এ সময় তিনবার মোহামেডানের গোলপোস্টে শট নেয় জামালের তিন বিদেশি স্ট্রাইকার। খেলায় ৭ মিনিটে প্রথম ব্যর্থ কাউন্টার অ্যাটাকে যায় মোহামেডান। এ সময় দলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোস্তফা মোহাম্মদ সিদ্দিক একাই বল নিয়ে প্রবেশ করেন জামালের ডি বক্সে। কিন্তু বেশ কৌশলে তাকে রুখে দেন জামালের ডিফেন্ডাররা।
এরপর আরো ৭ বার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে জামাল। কিন্তু প্রতিবারই তাদের লক্ষ্যের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়ায় মোহামেডানের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা এবং গোলরক্ষক। এর মাঝে ১১ মিনিটে মামুনুলের ফ্রি কিক প্রায় গোলপোস্ট ছুয়ে যায়। কিন্তু গোলকি হাত দিয়ে বলটি মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন।এদিকে মোহামেডানের পক্ষে গোলের  সুযোগ সৃষ্টি করেন মিশরের সিদ্দিক। কিন্তু ২৮ মিনিটে তার ক্রস থেকে হেড করতে ব্যর্থ হন এমিলি।
দুই দলের এমন অনেক ব্যর্থতার মাঝ থেকেই হঠাৎ গোল করেন সনি নর্দে। মধ্যমাঠ থেকে করা মামুনুলের পাস থেকে তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ের শট নেন তিনি। এ সময় ডিফেন্ডারদের আড়ালে মোহামেডানের গোলকি মামুন অসহায় হয়ে দাড়িয়ে থাকেন। এরপর ৪৩ মিনিট ও ৪৫ মিনিটে আরো দু’টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে জামালের সনি নর্দে। কিন্তু প্রতিবারই তার শট রুখে দেয় মোহামেডানের বিদেশি ডিফেন্ডার বেব্যাক।
দ্বিতীয়ার্ধেও গঠনতান্ত্রিক আক্রমণে যায় শেখ জামাল। সফলতা আসে ৫৪ মিনিটে। এসময় আবারো মমিনুলের লং পাস থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে প্রবেশ করেন সনি নর্দে। দুইজন বেব্যাক সহ আরো একজন ডিফেন্ডারকে নিজের পায়ের জাদুতে নাজেহা ল করে শট নেন তিনি। তার সেই শটে বোকা বনে যান গোলকি মামুনও। গোলপোস্টে বামপাশে করা তার শট ধরার জন্য ডানপাশে লাফ দেন তিনি।
৫৯ মিনিটে আরো একটি চমৎকার ফ্রি কিক নেন নর্দে। কিন্তু এবার তার বল রুখে দেন মামুন। এরপর শুরু হয় মোহামেডানের বিতর্কিত খেলা। ৬০ মিনিটে সনি নর্দেকে লাথি মেরে বসে দলটির নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার সিসান ইদুয়া। বিনিময়ে হলুদ কার্ড পান তিনি। কিন্তু আহত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় নর্দেকে। এ সময় মোহামেডান ও জামালের খেলোয়াড়রা হাতাহাতি শুরু করলে ৭ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। পুনরায় খেলা শুরু হলে জামালের মাঝে বেশ ভাল ভাবেই লক্ষ্য করা যায় নর্দের অভাব। এ সময় আক্রমণে নামে মোহামেডান। ৭৩ মিনিটে তপুর লং শট একটুর জন্য মিস করে মোহামেডানের ফরোয়ার্ডার এমিলি ও সিদ্দিক। ৭৭ ও ৭৮ মিনিটে আরো দুইটি গোলের সুযোগ হারায় মোহামেডান। ৭৭ মিনিটে জাহিদ বল নিয়ে ডি বক্সে প্রবেশ করলে তাকে রুখে দেয় জামালের ডিফেন্ডাররা। কিন্তু সেখান থেকে বল পেয়ে গোলপোস্টের উপর দিয়ে শট নেন মিশরের ফরোয়ার্ডার সিদ্দিক। এরপরের মিনিটেই জামালের ভুলবোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে ওয়াহেদ দ্রুত গতিতে বল নিয়ে প্রবেশ করেন ডি বক্সে। তার বেশ জোড়ালো শটে পা বাড়িয়ে দিয়ে জামালকে রক্ষা করেন ডিফেন্ডার রায়হান হাসান।
তাই বলে আক্রমণ থামায়নি শেখ জামাল। বরং ৭০ মিনিটে ওয়েডসন চমৎকার এক ক্রস দেন মোহামেডানের ডি বক্সে। কিন্তু এবারও নর্দের বদলে শট নেয়ার কেউ না থাকায় সরাসরি মামুন বলটি লুফে নেন। ৭৫ মিনিটে আবারও দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন ওয়েডসন। চমৎকার তার শট এবারও রুখে দেন মামুন। এই শট রুখে দিলেও শেষ রক্ষা হয় নি মোহামেডানের। ৮৩ মিনিটে সোহালের ক্রস থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন জামালের অধিনায়ক মামুনুল। ফলে ৩-০ ব্যবধান নিয়ে নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে যায় জামাল।
কিন্তু জামালের এই নিশ্চত জয়ের চিন্তায় ছেদ ঘটে পরের মিনিটে চুকা চার্লসের গোলে। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে একটুও দেড়ি না করে শট নেন তিনি এবং জামালের গোলকি জিয়াকে বোকা বানিয়ে শান্তনা সূচক গোলটি করেন তিনি।
ম্যাচ শেষে জামালের অধিনায়ক মামুনুল বলেন, ‘গত বছর নর্দে এবং আমি প্রায় ২৮ টি ম্যাচ একত্রে খেলেছি। সেটাই কাজে লাগছে এ বছর। কিন্তু তার ইনজুরি অবশ্যই আমার দলের জন্য খারাপ। আমরা আশা করছি সেমির আগেই তাকে মাঠে পাব।’
এদিকে হারের কারণ হিসাবে আবারও নিজেদের বিদেশি খেলোয়াড়দের দুষলেন মোহামেডান কোচ জুয়েল রানা। তিনি বলেন, ‘এক সনি নর্দেই দুই দলের পার্থক্য তৈরী করে দিয়েছে। আমাদের দলে এমন কোন খেলোয়াড় ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, আমাদের রক্ষণভাগের অনেক ভুল ছিল। আশা করছি লীগের আগে নিজেদের শুধরে নেবার চেষ্টা করব আমরা।’

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ৩০, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.