প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বিতর্কের নেপথ্যে কী

এপ্রিল ১, ২০১৪

Cabinet‘জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা’র বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের অপপ্রচার ষড়যন্ত্র কি-না তা খতিয়ে দেখার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রিসভায়।
দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে অস্বীকার করার মতো বিষয় রাষ্ট্রদোহ কি-না তাও বিবেচনায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সোমবার মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে এ প্রস্তাব দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বৈঠকের পর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সব কথা জানান।
মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়, বিএনপির এ ধরণের অপপ্রচার বা প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে অস্বীকার করা মানেই রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা। বিএনপির এ ধরণের প্রচারণা নতুন ষড়যন্ত্র কি-না তা খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বানানোর যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তা অসৎ ও উদ্দেশ্যমূলক হতে পারে। এই অপপ্রচার যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে মন্ত্রিসভাকর বৈঠকে।
মন্ত্রিপরিষদের ওই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে গ্রিনেজ বুকে নাম উঠানোর কথা একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনার অংশও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি ভেবে দেখার আহবান জানানো হয়।
কারণ হিসেবে ওই মন্ত্রী জানান, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাস্তবায়ন হলে শেখ হাসিনাসহ দলটি নিশ্চিহ্ন হতো হয়তো। এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় নতুনভাবে পরিকল্পনা নেওয়া যচ্ছে কীনা তা ভেবে দেখা দরকার।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে এই প্রপাগণ্ডার পরেও টেলিভিশন টক-শোতে সুশীল সমাজের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আর তা নিয়ে কোনো প্রশ্নও ওঠেনি টক-শোতে। আওয়ামী লীগের বেলায় পান থেকে চুন খসলেও টক-শোতে ব্যাপক হৈ চৈ হয়। অথচ এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেন, যে কিনা দেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি তাকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করে আলোচনা শুরু করলে ছেলে তারেক রহমানকে বিরত না রেখে বা তা সংশোধন না করে খালেদা জিয়া আরো প্ররোচণা দিয়েছেন।
এর আগে বিএনপি ২৭ মার্চ কালুর ঘাটে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা পড়াটি ২৬ মার্চ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বলে প্রচারণা চালায়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এমন ডাঁহা মিথ্যা প্রচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্ত্রিসভাকে জানান কয়েকজন সদস্য।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পর বর্তমান প্রজন্মের লোকজনের সে বিষয়ে সরাসরি কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অনেকে প্রকৃত ইতিহাস জানে না।
এ প্রসঙ্গে ওই মন্ত্রী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে হবে।
মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেন, বিএনপির এসব অপ্রচার, প্রপাগণ্ড বা ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগের যতো ধরণের সক্ষমতা রয়েছে তা সাংগঠনিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে এসব প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা জানান, আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বেশি, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে যদি প্রচার চালায় তাহলে কি অবস্থা খারাপ হবে।
তবে কেউ কেউ বিষয়টি আমলে না নেওয়ার যুক্তি দেন। তারা বলেন, এটি পাগলের প্রলাপ। আমলে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ সহকারে শুনেন। তবে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।
তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ নিয়ে জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনা হওয়ায় বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচকভাবে দেখেছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.