কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন আর নেই
ঢাকা জার্নাল: এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা ও বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি আনোয়ার হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দুইটার দিকে রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে তার জীবনাবসান হয়েছে।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
এদিকে, হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই জনপ্রিয় অভিনেতা ১৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। জীবনাবসানের সময় এই অভিনেতা স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ২নং ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন তার চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
রাতে এই গুণী অভিনেতার লাশ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। শিল্পীর স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার, ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনসহ তার অনেক ভক্ত সাধারণ হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
শুক্রবার বাদজুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
`নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ` ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে আনোয়ার হোসেন ‘বাংলার মুকুটহীন সম্রাট` অভিধা পেয়েছিলেন।
২০ আগস্ট এই গুণী শিল্পীর মেয়ে জিনাত জানিয়েছিলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট রোববার থেকে বাবার শরীরের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। পরে আমি তাঁকে কলাবাগানে আমার বাসায় নিয়ে আসি। এরপর বিভিন্ন টেস্টের পর জানা যায়, তাঁর গল ব্লাডারে পাথর রয়েছে। বাবা মুখ দিয়ে কিছুই খেতে পারছেন না। তাই, আপাতত স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
বরেণ্য এই অভিনয় শিল্পী ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম নজির হোসেন ও মায়ের নাম সাঈদা খাতুন। তিনি ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান।
১৯৫১ সালে তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
আনোয়ার হোসেন স্কুলজীবনে প্রথম অভিনয় করেন। তাঁর প্রথম অভিনীত প্রথম নাটক- ‘পদক্ষেপ’ (আসকার ইবনে সাইকের লেখা)।
১৯৫৭ সালে আনোয়ার হোসেন ঢাকায় চলে আসেন। এ বছরই পরিচয় ঘটে পরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে। এর পর পরই তিনি অভিনয় শিল্পে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর অভিনীত প্রথম ছবির নাম- ‘তোমার আমার’।
এ ছবিতে তিনি তাঁর অভিনয়ের স্বাক্ষর রাখেন। এরপর একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন এই বরেণ্য শিল্পী।
অভিনেতা আনোয়ার হোসেন অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ`, `নাগর দোলা`, `জীবন থেকে নেয়া’, ‘সূর্যস্নান’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জোয়ার এলো’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘বন্ধন’, ‘পালঙ্ক’, ‘অপরাজেয়’, ‘পরশমণি’, ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, `রংবাজ`, `নয়নমনি`, `রূপালী সৈকতে`, `ধীরে বহে মেঘনা`,`ভাত দে` উল্লেখযোগ্য। নায়ক হিসেবে তার শেষ ছবি ‘সূর্য সংগ্রাম’।
পুরস্কারপ্রাপ্তি: কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১০, আজীবন সম্মাননা, পাকিস্তানের নিগার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি শিল্পী আনোয়ার হোসেনের চিকিত্সার জন্য তাঁর আত্মীয়-স্বজনের কাছে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের চিকিত্সার খোঁজখবর নেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৩