আহমদ শফী বিকৃত মানসিকতার লোক, ইসলামের অবমাননাকারী
ঢাকা জার্নাল: আল্লামা আহমদ শফী বিকৃত মানসিকতার লোক উল্লেখ করে তার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দবি জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
তিনি বলেছেন, “নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা করে এবং মহিলাদের দেখলে দিলের মধ্যে লালা বের হয় এই কথা বলে সমগ্র মানবজাতিকে অপমান করেছেন।”
আহম্মদ শফী তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামকে অবমাননা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্ম নারীকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম নারীকে পুরুষের পাশাপাশি লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছে।”
রোববার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন করেন।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আল্লামা আহমদ শফী বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে চায়।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত এবং কিছুটা হতাশাগ্রস্থ। বিভিন্ন সোসাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফী নারীদের নিয়ে কিছু কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন। তিনি নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “তেতুল দেখলে মানুষের যেমন জিভে জল আসে তেমনি নারীদের দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়”। তিনি বলেন, মহিলারা তেতুলের চেয়ে আরও বেশী খারাপ। মহিলাদের দেখলে দিলের মধ্যে লালা বের হয়, লোভ লাগে। তিনি এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধুমাত্র নারী নয়- সমগ্র মানবজাতিকে অবমাননা করেছেন। আমি তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
মেহের আফরোজ চুমকি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আল্লামা আহমদ শফী একজন বিকৃতি মানসিকতার লোক। তিনি শুধুমাত্র নারীদেরকেই অপমান করে নাই- তিনি পুরুষদেরও অপমান করেছেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পুরুষকে লালসাময় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সে তার মা, বোন, মেয়ে, স্ত্রীকে তেতুলের সাথে তুলনা করে মা, মেয়ে, বোন ও স্ত্রীকে অসম্মান করেছেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের মাদ্রাসায় শিশুদের কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তাও স্পষ্ট হয়েছে। আমাদেরকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।”
প্রতিমন্ত্রী আল্লামা শফীর বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, আল্লামা শফী বলেছেন, নারীদের কাজ হলো গৃহের অভ্যন্তরে থাকা, আসবাবপত্র দেখভাল করা, শিশুদের যতœ নেয়া। এমনিভাবে তিনি মহিলাদের সাথে এক সাথে লেখা পড়া করা, কাজ করাও নিষেধ করেছেন।”
কর্মরত গার্মেন্টস্্ কর্মীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আল্লামা শফি বলেছেন, গার্মেন্টেসের মেয়েরা জেনা কইরা টাকা রোজগার করতেছে।” মেয়েদের নাকি ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত পড়াশুনা করলেই চলবে এ কথাও বলেছেন বলে উল্লেক করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, “আহম্মদ শফী তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামকে অবমাননা করেছেন। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্ম নারীকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম নারীকে পুরুষের পাশাপাশি লেখাপড়া, ব্যাবসা বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছে।”
আল্লামা শফীর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সংসাদ সম্মেলনে বলেন, “বিবি খাদিজা ও মা আয়েশা-কে অপমান করেছেন তিনি। মা আয়েশা যুদ্ধ করেছিলেন, বিবি খাদিজা ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি নারী বিভিন্ন প্রফেশনে কর্মরত আছে। নারীরা এই কর্তব্য দক্ষতা ও শালিনতার মাধ্যমে পালন করছে। হেফাজত এই নারীকে গৃহবন্দী রাখতে চায়। তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বানাতে চায়।”
বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী উল্লেখ করে চুমকি বলেন, “এই নারীরা আজ বিভিন্ন প্রফেশনে সফলভাবে কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি মডেল। আমাদের এই অবস্থান থেকে কেউ পিছু হটাতে পারবে না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে আজ হেফাজতের এই অবাস্তব বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে।”
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৪, ২০১৩।