ডিবির অভিযানে ইয়াবা রানী আটক
ঢাকা জার্নাল: আসন্ন ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে রাজধানী জুড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকের মজুদ গড়ে তুলছে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য রাজধানীতে মাদকের ডিলারের মাধ্যমে প্রবেশ করে আবার তা চলে যাচ্ছে সেবীদের কাছে।
ডিবি পুলিশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে তোলা হচ্ছে মাদকের মজুদ। গোয়েন্দা পুলিশ সতর্কবস্থায় থেকে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
মাদকের রানী হিসেবে পরিচিত তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ম্যানিলা চৌধুরীকে আটকের পর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম, ডিসি পশ্চিম শেখ নাজমুল আলম, এডিসি মশিউর রহমান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ২০ জুন বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, চকবাজার থানার নাজিম উদ্দীন রোডে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ইয়াবা বিক্রির জন্য একত্রিত হবেন।
এ তথ্যের ভিত্তিতে এডিসি মশিউর রহমান, এসি তোরাব আলী এবং এসি মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দ্রুত সেখানে অভিযান চালায়।
অভিযান চালিয়ে এ সময় ইয়াবা ব্যবসায়ী আসিফ ও জানে আলমকে আটক করা হয় ও তাদের কাছ থেকে নয় হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এরপর আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা আরো বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম বলেন। তাদের স্বীকারোক্তির পর রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কুলসুম (৩২) নামে এক নারীকে চার হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কুলসুমকে আটকের পর ‘ইয়াবা রানী’ হিসেবে খ্যাত ম্যানিলার সন্ধান পাওয়া যায়।
পরে মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ইয়াবা রানী’ ম্যানিলা চৌধুরী, আবু তাহের এবং খালেদকে আটক করা হয়। এদের কাছ থেকে মোট ১৭ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘ইয়াবা রানী’ হিসেবে খ্যাত ম্যানিলা চৌধুরী তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
এর আগেও তিনি ইয়াবাসহ আটক হয়েছিলেন। ১০ মাস কারাগারে আটক থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আবারো তিনি ইয়াবা ব্যবসায় নিয়োজিত হন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, “২০০৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংকে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার অন্যতম হোতা শাকু ওরফে মাহমুদের হয়ে কাজ করেন তিনি। এর আগে ‘চোর’ থাকলেও বর্তমানে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে দেশে ইয়াবা এনে বিভিন্ন ডিলারের কাছে বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে মাদকের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। সামনে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর মাদক সিন্ডিকেট মজুদ বাড়াচ্ছে। তারা ঈদের সময় এই মাদকগুলো বাজারে ছাড়বেন।”
মাদকের এই সিন্ডিকেটে বিভিন্ন পেশার লোকজন জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আড়তদার, চাকরিজীবী, পরিবহন সেক্টর, বিভিন্ন পণ্য আমদানিকারক এমনকি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়াবা সিন্ডিকেটে রয়েছেন। আমরা তাদের নাম পেয়েছি। এবিষয়ে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।”
মনিরুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক মাসে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মাদক, অস্ত্র, ডাকাত ও চাঁদাবাজ আটক অভিযান কিছুটা স্তিমিত থাকলেও বর্তমানে তা আবার জোরদার করা হয়েছে।”
পুলিশ এ সময়ে সতর্কবস্থায় থাকলে মাদকের ব্যাপকতা কমবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, আটকদের বিরুদ্ধে রাজধানীর চকবাজার, রামপুরা এবং মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
ঢাকা জার্নাল, ১৪১১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৩