Leadসংবাদ শিরোনাম

কর্নেল তাহের ‘হত্যাকাণ্ড’: কালো অধ্যায় উন্মেচনের দাবি

justice-tmঢাকা জার্নাল: কর্নেল তাহেরের ভাই ড. আনোয়ার হোসেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে ইতিহাসের কালো অধ্যায় উন্মেচনের দাবি জানিয়েছেন৷ বলেছেন, তাহেরের মতো আর কাউকে যেন গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে হত্যার সুযোগ না থাকে৷

সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে ২০ মে সোমবার৷ তাতে বলা হয়েছে- জিয়াউর রহমান আগেই তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যাপরে মনস্থির করেছিলেন৷ অর্থাৎ, তাহেরকে ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়৷

১৯৭৬ সালের ১৪ই জুন সেই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়৷ আর ১৭ই জুলাই দেয়া হয় মৃত্যুদণ্ডের রায়৷ যা কার্যকর করা হয় ২১শে জুলাই৷ অবাক করা ব্যাপার হলো, ট্রাইব্যুনালের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন করা হয় ৩১শে জুলাই, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, সামরিক বাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান হয়৷ এরই এক পর্যায়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণের পর, তাহেরসহ ১৭ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ প্রসঙ্গত, জিয়াউর রহমানকে কর্নেল তাহেরই বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করেছিলেন৷

একই ট্রাইব্যুনাল তাহেরের ছোট ভাই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেকেও ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়৷ তার মধ্যে আনোয়ার হোসেনকে প্রায় ১০ বছর জেল খাটতে হয়৷ তিনি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য৷ তিনি জানান, তাহেরকে যিনি হত্যা করেছেন তার বিচার এখন আর সম্ভব নয়৷ কারণ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এখন আর বেঁচে নেই৷ বাংলাদেশের আইনে মৃত ব্যক্তির বিচার চলে না৷ তবে সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল আলি এখনও বেঁচে আছেন৷ আদালত তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে তাকে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন৷

ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর, জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে সমারিক বেসামরিক শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে৷ অনেক সেনা সদস্যকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি৷ এই কালো অধ্যায় জাতির সামনে পুরোপুরি উন্মোচন করা প্রয়োজন৷ এ জন্য তিনি একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান৷ এই কমিশন ঐ সময়কালের সব ঘটনার তদন্ত করলে জাতি নির্মম হত্যাকাণ্ড, সামরিক কর্মকর্তা ও সেনা নিধনের কালো অধ্যায়ের কথা জানতে পারবে৷ স্বজন হারনো অনেক পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে পারবে৷ জানা যাবে কারা দেশদ্রোহী আর কারা দেশ প্রেমিক৷

তিনি বলেন, কোনো গোপন বা সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচার সর্বোচ্চ আদালতের অনুমোদন ছাড়া কার্যকর করা যাবে না বিধান রেখে এই আইন প্রণয়ন করতে হবে৷ বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে এই ‘রক্ষা কবচ’ রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকে এহেন প্রহসনধর্মী বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা না যায়৷

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ তাহেরের পরিবারের রিট আবেদনের পর, গোপন বিচারকে অবৈধ বলে রায় দেয় ২০১১ সালের ২২শে মার্চ৷ সোমবার প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে তাহেরসহ সেই আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশদ্রোহী নয়, দেশপ্রেমিক ঘোষণার আদেশ দেয়া হয়েছে৷ আর পরিবারের সদস্যদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে ৷

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো কারা ইতিহাসের নায়ক আর কারা খলনায়ক৷

সূত্র: ডিডব্লিউ.ডিই

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.