Leadআইন-আদালত

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ হবে বিচারপতি

ঢাকা জার্নাল ডেস্ক:

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। এখন থেকে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে থাকবে।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রোববার (২০ অক্টোবর) এ রায় দেন। এ রায়ের ফলে দীর্ঘ আট বছর পর নিষ্পত্তি হলো গুরুত্বপূর্ণ এ রিভিউ আপিলের।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আদালতে রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে। মার্শাল প্রক্লেমেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

পরে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদের হাতে। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

দীর্ঘদিন পর রুল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। পরবর্তীতে একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।

তবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এরপর কয়েক দফা মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও রিভিউয়ের শুনানি হয়নি।

সবশেষ গত ১০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি। এদিকে গত ১৬ অক্টোবর ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এদিন (১৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বিক্ষোভরত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আমরা আলোচনা করেছি। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। বিচারপতিদের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বিগত সরকার বিচারপতিদের অপসারণে একটি অ্যামেন্ডমেন্ট নিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেটি বাতিল করে দেয়। এটি আবারও রিভিউর জন্য সরকার আবেদন করেছে। রোববার (২০ অক্টোবর) আদালত খোলার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেবেন।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বিচারপতিদের বিচারক নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি, আবার অপসারণও করেন রাষ্ট্রপতি। এখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির যা করণীয় তিনি তা করেছেন। ইতোমধ্যে ১২ জন বিচারককে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে, ২০ তারিখ তারা বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন না। আমরা আশা করছি, ২০ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করবে। পর্যায়ক্রমে কী হয় সেটা জানা যাবে।’

এরই ধারাবাহিকতায় আজ রোববার (২০ অক্টোবর) রিভিউ আবেদনটি সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় শুনানি হয়। শুনানির পর আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।