রাজশাহীস্পটলাইট

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর উদ্বোধন ডিসেম্বরে, ১২০ কি.মি. গতিতে চলবে ট্রেন

ঢাকা জার্নাল ডেস্ক:

মূলকাজ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানোও। এখন চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের ফিনিশিং দেওয়ার কাজ। সব ঠিক থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চলতি বছরের ডিসেম্বরেই খুলে দেওয়া হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। উন্মুক্ত করার পর এই সেতুতে ট্রেন চলবে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে।

যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর কোলঘেঁষে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’টি নির্মিত হচ্ছে। দুটি প্যাকেজে শুরু হওয়া প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে রেলওয়ে সেতুটি উদ্বোধনের আশা প্রকাশ করে প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ডব্লিউডি ১ এবং ডব্লিউডি ২ এই দুইটি প্যাকেজে ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’টির কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। অবকাঠামো নির্মাণ শেষে পুরো সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেতুর পূর্ব-পশ্চিম পাশের এ্যাপোচ লাইন, স্টেশন নির্মাণসহ সব ধরণের কাজ শেষ। এখন চলছে পর্যবেক্ষণ। ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবেন তারা।

সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ট্রেন যোগাযোগ স্থাপনে যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়। যমুনা নদীর পশ্চিম পাশের সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে পূর্ব পাশের টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পর্যন্ত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। দুই প্যাকেজে ভাগ করে এর নির্মাণ ব্যায় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। দুটি প্যাকেজই বাস্তবায়ন করছে জাপানের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ডব্লিউডি-১ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ কর্পোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। এছাড়া ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার।

সূত্র বলছে, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেলওয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজে ১ নম্বর পিলার থেকে ২৩ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ অংশে এবং ডব্লিউডি-২ এ ২৪ নম্বর পিলার থেকে ৫০ পর্যন্ত ভূঞাপুরের মধ্যে পড়েছে। ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে।

প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে অ্যালাইনমেন্ট, লেভেল ঠিক করা, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ, সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের স্টেশন নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ফিনিশিং শেষ হলে কমিশনিংয়ের পরই সেতুটি চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হবে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগ জানিয়েছে, প্রবাহমান যমুনা নদী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলকে বিভক্ত করেছে। ১৯৯৮ সালে এই নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর ওই সেতুতে সারাদেশের সাথে রেল যোগাযোগও স্থাপন করা হয়। কিন্তু রেল চলাচলের কারণে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়। একারণে ট্রেনের গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার করা হয়।

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেলওয়ে সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা কাজ করছেন। তাছাড়া জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেল লাইন স্থাপন করায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র ডুয়েল গেজ লাইনের ওপর দিয়ে ব্রডগেজ রেল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে এবং মিটার গেজ রেল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করবে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলওয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সারাদেশে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে ও বিড়ম্বনা থাকবেনা।