আন্তর্জাতিক

হ্যারিকেন মিল্টন: ‘জীবন-মৃত্যু’ পরিস্থিতিতে ফ্লোরিডার বাসিন্দারা

ঢাকা জার্নাল ডেস্ক:

প্রবল শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় (হ্যারিকেন) মিল্টন যত নিকটবর্তী হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক-দুশ্চিন্তাও বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আবহাওয়া দপ্তর ইতোমধ্যে মিল্টনকে ‘ক্যাটাগরি ৫’ ঝড় হিসেবে উল্লেখ করে এক পূর্বাভাসে বলেছে, গত ১০০ বছরে এত শক্তিশালী কোনো ঝড় দেখা যায়নি।

আটলান্টিক মহাসাগরে উদ্ভূত মিল্টন গত সোম এবং মঙ্গলবার শক্তি সঞ্চয় করে ইতোমধ্যে ক্যাটাগরি ৫ ঝড়ে পরিণত হয়েছে। মার্কিন আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ফ্লোরিডার জনবহুল শহর টাম্পা বে’র উপকূলে আছড়ে পড়বে মিল্টন। এ সময় টাম্পা বে’ এবং আশপাশের এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দপ্তর থেকে ইতোমধ্যে ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “ঘূর্ণিঝড়টি ফ্লোরিডার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য জীবন-মৃত্যুর সংকট সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই যত শিগগির সম্ভব উপকূলীয় শহরগুলোর লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।”

ফ্লোরিডার্ ‍উপকূলীয় শহর ব্রাডেনটনের বাসিন্দা গেরাল্ড লেমাস জানান, তিনি তার ৪০ বছরে জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখেননি এবং এই প্রথম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে সপরিবারে শহরের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিবিসিকে লেমাস জানান, “ক্যাটাগরি ৫ ঝড়ের মানে হলো, একটি দানবাকৃতির টর্নেডো আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়টি যাবে, সেগুলো রীতিমতো তছনছ হয়ে যাবে। এটা একটা লাইফ চেঞ্জিং ঝড় হতে যাচ্ছে।”

“প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শহরে ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে কখনও আমার জীবনে ঘটেনি। তবে এবার আমি আমার প্রিয় শহর ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমার ৮ বছরের একটি মেয়ে আছে। তার জীবনকে কোনোভাবেই আমি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারব না।”

এমএল ফার্গুসন নামের এক নারী জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে হ্যারিকেন হেলেনের আঘাতে তার বাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেটির মেরামতের কাজ সবে শুরু করেছিলেন, এমন সময় হারিক্যান মিল্টনের কারণে মেরামত স্থগিত রেখে ব্রাডেনটন ছাড়তে হচ্ছে তাকে।

“হেলেনের আঘাতে আমার বাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছিল, সেই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আসছে মিল্টন, যেটি হেলেনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এই ঝড়টি আঘাত হানার পর সম্ভবত আমি পুরোপুরি গৃহহীন হয়ে যাব,” বিবিসিকে বলেন এমএল ফার্গুসন।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার উপকূলে আঘাত হেনেছিল ক্যাটগরি ৪ হ্যারিকেন হেলেন। শক্তিশালী সেই ঝড়ের আঘাতে ফ্লোরিডাসহ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় ৫টি অঙ্গরাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ শতাধিক মানুষ।

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ফ্লোরিডার দক্ষিণ উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে মিল্টন। গতকাল মঙ্গলবার এই অঙ্গরাজ্যের দক্ষিনাঞ্চলীয় শহরগুলোর প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের সামনে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। অনেক পেট্রোল পাম্পের সমানে ‘জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে’ নোটিশও দেখা গেছে।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেছেন, ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ইতোমধ্যে কয়েক ডজন আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা নিজ শহর ত্যাগ করতে ইচ্ছুক নন, তাদেরকে ঝড় আসার আগে ঠিক সময়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি।

ফ্লোরিয়ার যে শহরের উপকূলে ঝড়টি আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর, সেই টাম্পা বে’র বাসিন্দা চিয়ান্না পারকিন্স জানিয়েছেন, শহর ত্যাগের কোনো পরিকল্পনা তার নেই।

বিবিসিকে এই নারী বলেন, “যে বাড়িতে আমি থাকি, সেটি তৈরি করতে আমার যাবতীয় সঞ্চয় ভাঙতে হয়েছে। মাত্র গত মাসে সেটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আমি যদি বাইরের কোনো শহরে যাই, তাহলেও মানসিক শান্তিতে থাকবো না। সারাক্ষণ বাড়ির কথা মনে পড়বে। তাই যা কিছু হোক, আমি শহর ছাড়ছি না।”

সূত্র : বিবিসি