Lead

বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত: প্রধানমন্ত্রী

ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত। এখনও দেখবেন যা কিছুই করেন, তাদের কোনোটাই ভালো লাগে না। এই ভালো না লাগা গ্রুপই বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। কিছু ভালো লাগে না, এটাই হলো বড় কথা।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সবকিছুই অর্জন করতে হয়েছে অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত আমাদের মা-বোনদের জাতির পিতা স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনে এ দেশের মানুষ যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।

একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনও আওয়ামী লীগের অবদান উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, ১৯৫৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়, সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং শহীদ মিনার তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাজেটেও টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মার্শাল ল জারি করা হয়। তবে সেই সময় সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল, শাসনতন্ত্র, সেখানে উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে আর ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের, বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি সেটা একমাত্র আওয়ামী লীগই দিয়েছে। এটাই হলো বাস্তবতা।

বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। অনেক জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবীর বক্তব্য ছিল—‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) আবার ভাষা আন্দোলনে কী অবদান রেখেছিল? তিনি তো জেলেই ছিলেন।’ জেলে তিনি ছিলেন কেন? তিনি তো ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের মানুষের কথা বলতে গিয়েই তো বারবার তিনি জেলে গেছেন। পাকিস্তান নামে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেও এই পূর্ব বাংলার মানুষেরই অবদান ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে তাদের শাসন বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিতে চাইলে প্রতিবাদ করায় বঙ্গবন্ধু বারবার গ্রেফতার হন। ওই সময় তিনবার গ্রেফতার, সবশেষ গ্রেফতারের পর আর মুক্তি দেয়নি। বন্দি থাকা অবস্থায়ই তিনি যোগাযোগ রাখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখবেন ছাত্রনেতারা কীভাবে গোপনে মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে হাসপাতালে দেখা করতেন এবং তিনি তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা রিপোর্ট লিখতো। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে এসবি অফিস থেকে ওইসব ফাইল সংগ্রহ করি। এই ফাইলগুলো আমি এবং আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ সম্পূর্ণ পড়ি। সেখানে ভাষা আন্দোলনে কী কী কাজ তিনি করেছেন, সেই কথাগুলো স্পষ্টভাবে রয়েছে। রিপোর্টগুলো যেহেতু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে, কাজেই এটা তো আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এসব তথ্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দেশের নামকরা একজন (বদরুদ্দীন ওমর), যার বাবার ভাষা আন্দোলনে অনেক অবদান, তাদের অবদান নিয়ে খুব লেখেন, তিনি আমার ওপর ক্ষেপেছেন। তিনি বললেন, এসব তথ্য নাকি বানোয়াট। তখন আমি আর বেবী সেই তথ্যগুলো নিয়ে এম আর আখতার মুকুলের বাসায় যাই। তাকে বললাম, আমরা তো চুনোপুঁটি। আপনি লিখবেন, এই যে দলিল। আপনি জবাব দেবেন। তিনি লিখলেন, তারপর আর কোনও কথা নেই। ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত। এখনও দেখবেন যা কিছুই করেন, কোনোটাই তাদের ভালো লাগে না। এই ভালো না লাগা গ্রুপই বদনাম ছড়ায় সব জায়গায়। কিছু ভালো লাগে না, এটাই হলো বড় কথা।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে এখন আর কেউ মুছে ফেলতে পারবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা করা, ছুটি দেওয়া এবং শহীদ মিনার তৈরির প্রকল্প গ্রহণ ও বাজেট দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন, বাঙালি আজ মুক্তি অর্জন করেছে। এমনকি স্বাধীনতার ইতিহাস থেকেই জাতির পিতার অবদান মুছে ফেলা হয়েছিল। কোথাকার একজন মেজর ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলো আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলো! এরকম বিকৃত ইতিহাসও শোনানো হয়েছে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নুরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।