স্পটলাইট

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা: পাকিস্তানিদের কূটকৌশল নস্যাৎ করেন বঙ্গমাতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয় দফা বানচাল ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে পাকিস্তানি জান্তারা। কিন্তু ফুঁসে ওঠে দেশবাসী। ১৯৬৯ এর শুরুতেই স্বৈরাচার আইয়ুব খানের গদি টলায়মান হয়ে ওঠে। নিজেকে রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেয় আইয়ুব খান। এতে রাজি হয় অনেক রাজনীতিবিদ। তবে এই খবর পাওয়া মাত্র বিরোধিতা করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা। এসময় শত প্রতিকূলতা ও চাপের কাছেও মাথা নত করেননি তিনি। ফলে মুক্ত মানুষ হিসেবে জেল থেকে বের হয়ে আসেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পতন ঘটে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাবের খবর শুনে, বঙ্গমাতা স্বামীর কাছে খবর পাঠালেন যে- দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। মামলা তুলে বঙ্গবন্ধুসহ বন্দি ৩৫ জনের সবাইকে মুক্তি দিলেই গোলটেবিল বৈঠক হতে পারে, নাহলে একা প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বৈঠকে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বেগম মুজিবকে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে ভয় দেখালেন যে, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুব খানের সাথে বৈঠক না করলে শেখ মুজিবকে হত্যা করবে সেনাবাহিনী। কিন্তু এই ফাঁদ বুঝতে পারেন বঙ্গমাতা। তাই অবিচলভাবে এই দেশপ্রেমিক নারী বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের ৩৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই বিবাহিত, আমি তো একা না, মামলা প্রমাণিত হলে ৩৪ জন বিধবা হবে। আমার একার চিন্তা করলে হবে না। কিন্তু মামলা উইথড্র না করলে উনি লাহোরের সম্মেলনে যাবেন না। এটাই শেষ কথা।’ ঊনসত্তরের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোতে বেগম মুজিবের এই সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।

পরবর্তীতে রাজপথে প্রচণ্ড আন্দোলনের চাপেই স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে আপামর জনতা। একারণে পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু বলছেন, রেণু না থাকলে আমি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে পারতাম না।