শিক্ষা-সংস্কৃতিসারাদেশ

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে মাদরাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কুমিল্লার বরুড়ায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষকের মারধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

মৃত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. সিহাব হোসেন (১৩)। সে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামের ডিলারবাড়ির শুকুর আলীর ছেলে। সিহাব ওই ইউনিয়নের মেড্ডা আল মাতিনিয়া নুরানী মাদরাসার ছাত্র ছিল। সে ওই মাদরাসার শিক্ষক আবদুর রবের তত্তাবধানে নুরানী শিক্ষা গ্রহণ করছিল। আবদুর রবের বিরুদ্ধেই তাকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত সিহাবের ভাবি সাবিকুন নাহার ঝুমুর বলেন, ‘আমার দেবর সিহাবকে কয়েক দিন আগে মেড্ডা মাদরাসার শিক্ষক আবদুর রব অসংখ্য বেত্রাঘাত করেন। এ সময় সিহাব অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষকরা তাকে ওষুধ এনে খাওয়ান। তাতেও সে সুস্থ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাদরাসা থেকে ফোন করে আমাদেরকে সিহাবের অসুস্থতার খবর জানানো হয়। পরে আমার শ্বশুর মাদরাসায় গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।’

সিহাবের অবস্থা খারাপ হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাকে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেয়ার পথে শুক্রবার দুপুর ১টা ১২ মিনিটের সময় সিহাবের মৃত্যু হয়।

ঝুমুর আরো বলেন, ‘সিহাব প্রথমে বিষয়টি পরিবারকে জানায়নি। সে বলেছে, এমনিতেই তার শরীরে জ্বর এসেছে। পরে শুক্রবার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যখন তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়, তখন তার কাছে অসুস্থতার কারণ ভালোভাবে জানতে চাইলে সে বলে, আবদুর রব হুজুর তাকে মেরে এই অবস্থা করেছে। হুজুরের নাম বললে তাকে আবার মারবে বলে হুমকি দিয়েছে। তাই ভয়ে হুজুরের নাম বলেনি সিহাব।’

এদিকে শিক্ষকের ২০০ বেত্রাঘাতে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এমন খবর এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুর রবের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেড্ডা আল মাতিনিয়া নুরানী মাদরাসার প্রধান আহমেদ শফি বলেন, ‘আমি সিহাবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি বিষয়টি নিয়ে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না।’

স্থানীয় ঝলম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি মাদরাসার একজন শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে আঘাত করেছেন। এর বাইরে বিস্তারিত জানি না। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’