Lead

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের পদোন্নতির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের ওপর গুরুত্বারোপের নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান। রোববার (২৪ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘নৌবাহিনী ও বিমান নির্বাচনী পর্ষদ-২০২২’এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।

নৌ ও বিমান সদর দফতরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন হতে কমডোর, কমান্ডার হতে ক্যাপ্টেন এবং লে. কমান্ডার হতে কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।

অপরদিকে, বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে এয়ার কমডোর, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং উইং কমান্ডার পদে যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তারা সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি অত্যাধুনিক, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস অন্তর্ভুক্ত করেছি। সেইসাথে নতুন যুদ্ধজাহাজ কমিশনের পাশাপাশি নতুন নতুন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এই পর্ষদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে দেশমাতৃকার সেবায় আরও ভালোভাবে সম্পৃক্ত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, যা দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ এবং ঢাকার সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোরকে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরের কাজ বাস্তবায়ন করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছি। রূপকল্প-২০২১ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ফলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটিয়েছি। বর্তমানে রূপকল্প-২০৪১ এর সঙ্গে এসডিজি-২০৩০ কে সমন্বয় করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আজ নারী নাবিক ও এয়ারম্যানগণ দেশে এবং বিদেশে সুনাম ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ মিশনে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নারী শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে বিশেষত সম্প্রতি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা মোকাবেলায় নৌবাহনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যগণ স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর্তমানবতার সেবা করেছে।’

এর আগে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল নৌবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদে প্রধানমন্ত্রীর সদয় উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব বীর যোদ্ধাকে প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নৌপ্রধান বর্তমান সরকারের সময়ে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সশস্ত্র বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা সকল নৌ সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে নৌপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

পরিশেষে নৌপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর মূল্যবান দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ দক্ষ, সৎ ও উন্নত গুণাবলীর নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এরপর বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রণীত ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে অবকাঠামোগত সুবিধাদি, বৃদ্ধি পাচ্ছে জনবল কাঠামো। বিমান বাহিনী প্রধান আশ্বস্ত করেন যে, বিমান বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মেধা, মাঠ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান এবং বাস্তবসম্মত পেশাদারিত্বের পাশাপাশি দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।’

নির্বাচনী পর্ষদে বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, বিভিন্ন ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এবং অন্যান্য এয়ার অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনী পর্ষদ-২০২২ আগামী বুধবার (২৭ জুলাই) সমাপ্ত হবে।