Leadশিক্ষা-সংস্কৃতি

শিক্ষক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচারসহ ১১ দফা দাবি শিক্ষক সমিতির

শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরিকরণের লক্ষ্যে ঈদের পূর্বেই শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদানসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে ১১ দফা দাবি ও সারাদেশে শিক্ষক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান ও শিক্ষক নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে সারাদেশের বিক্ষুব্ধ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ ঢাকায় মহাসমাবেশসহ কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারী দেয়া হয়।

বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়েরর লক্ষ্যে আগামী শনিবার (২ জুলাই) সকাল ১১টায় সারাদেশে জেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ‘র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বড়ি ভাড়া এবং ৫০০ চিকিৎসা ভাতা পান। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে অমানবিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদর বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোন বদলী এবং পদেন্নতির সুবিধা নাই। একই কারিকুলামের অধীন সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ণের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী ও বেসরকারি এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকগণের বেতন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকগণের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়।

অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর বলেন, ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের চাকরির বয়স পূর্বের মতই রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগত্য নির্ধারণ না করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নানারূপ সমস্যা বিরাজ করছে। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনায়নের লক্ষ্যে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক শিক্ষক নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা জেলার সাভারে শিক্ষক হত্যা, নড়াইলে শিক্ষকের গলায় জুতার মালাসহ বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নারায়গঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতষ্ঠানে শিক্ষার মেরুদন্ড ও জাতি গঠনের স্থপতি শিক্ষকগণ আহত, নিহত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হবার জন্য তীব্র প্রতিবাদহ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। দাবি পূরণ না হলে আমি কঠোর আন্দোলনে যাব।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ১১ দফা দাবিসমূহ-

১. মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা

২. আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পূর্বেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ী ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান।

৩. পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রথা চালুকরণ এবং পেনশন প্রথা চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন বন্ধ করা।

৪. স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তকরণ।

৫. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের “প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক” এর বেতন স্কেল যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম গ্রেডে প্রদান।

৬. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলী প্রথা চালু করা।

৭. শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স সীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণ।

৮. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হরে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের পদায়ন।

৯. করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক প্রণোদনা এবং শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে শিক্ষা সহায়ক ডিভাইস প্রদান।

১০. ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বড়ির সদস্যদের ন্যুতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ

১১. শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি সকল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষানীতি-২০১০ এর দ্রুত বাস্তবায়ন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম, সহ সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মোঃ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা বেগম, সহ দপ্তর সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য প্রবীর রঞ্জন দাস, আজম আলী খানসহ প্রমুখ।