Lead

বেতন বাড়াতে গিয়ে চাকরি গেলে বেতনহীন হয়ে পড়বেন

নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ হলে তো চাকরি চলে যাবে। কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে এ কূল ও কূল, দু’কূল হারাতে হবে। তখন বেতন আর বাড়বে না, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

মঙ্গলবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রফতানির বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতনতো বন্ধ হয়নি। আমরাতো নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে বেতনটা সরাসরি পায়, সেই ব্যবস্থাটা করেছি। সরাসরি ফোনের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দিইনি। তারপরও গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বেতন বাড়া, এটা-সেটা নানা দাবিতে আন্দোলন করতে যায়। এই রফতানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?’

যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, তারা কাদের প্ররোচনায় দিচ্ছেন তাও ভেবে দেখতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব খোলাখুলি বাস্তব কথাটাই বললাম। যারা কিনবে তাদের ক্রয় ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন জায়গায় পণ্য পাঠাই। প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সেখানে মানুষ দুরবস্থায় আছে। কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে মানুষকে খাদ্য, টিকা, ওষুধসহ সবকিছু দিয়ে যেতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘কেউ আশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে, আমি বলবো শেষে এ কূল ও কূল, দু’কূল হারাতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আন্দোলন করে যদি কারখানা ও কাজ বন্ধ করে দেয় তা হলে তো চাকরি চলে যাবে। সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। তখন বেতন আর বাড়া নয়, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে।’

পঁচাত্তরের পরে বাংলাদেশে ১৯টি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা, সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নামে কত কর্মকর্তাদের ঘরে ঢুকে ঢুকে তাদের স্ত্রীদের মেরেছে, ডাক্তারদের মেরেছে। ১৫ আগস্টের পরে দফায় দফায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পরেই দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেল-জুলুম সহ্য করে আজকে দেশে স্থিতিশীলতা আমরাই আনতে পেরেছি। তারপরও বার বার প্রচেষ্টা; কী? আমাদের সরকারকে উৎখাতই করতে হবে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই প্রথম ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নতি হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ দেওয়ার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসে কারণে বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই সব দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইংল্যান্ডের মানুষ তিন বেলা খেতো। এখন একবেলা খাবার বাদ দিয়েছে। তাদের সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ভোজ্যতেল এক লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে।’

বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলেছিলাম। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কোনও দেশ করেনি।’

বিনামূল্যে করোনা টিকা ও করোনা পরীক্ষা করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারপরেও কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, তাহলে এই দেশটা একেবারে স্থবির হয়ে যায়, সাধারণ মানুষের কী অবস্থাটা হবে?’

গ্রামের মানুষের অবস্থা এখনও অনেক ভালো আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটা যাতে ভালো থাকে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। যে কারণে আমি আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব, খাদ্য মন্দা। সেখানে আমাদের নিজেদের মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলাতে হবে। নিজেদের খাবারের ব্যবস্থাটা অন্তত আমরা নিজেরা করবো।’

সবাইকে মিতব্যয়ী ও খাদ্য অপচয় না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই সঞ্চয় করুন। সবতো আর সরকার করতে পারবে না। নিজেকেও করতে হবে। এটা আমি আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে বলবো।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি। বলেন, ‘জিনিসের দামতো বাড়বেই।’

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।