শিক্ষা-সংস্কৃতিসারাদেশ

এমপির চড়ে কানের পর্দা ফাটল শিক্ষকের

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষক স্থানীয় এমপির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়ে আহত শিক্ষক সাজ্জাদ হোসাইনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর শিক্ষক মোশারফ হোসেন বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষকদের নিরাপত্তার দাবিতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে পুরো জেলাজুড়ে জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমপি এমন আচরণে ক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি নিজ বিভাগ সংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু কাজ করছিলেন। ওই সময় কয়েকজন বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ‘তুই শিবির করিস’ বলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে কানে গুরুতর ব্যথা পান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, কলেজের সাত বস্তা অব্যবহৃত খাতা চুরির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। ওই ঘটনার ছয় সাক্ষীর মধ্যে লাঞ্ছিত দুই শিক্ষকও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেলা একটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন। ওই সময় তাদের সঙ্গে খাতা চুরির সাথে জড়িত শিক্ষক আব্দুল মজিদ মণ্ডল, রকিবুল ইসলাম মিল্টন এবং সুব্রত কুমার নন্দী ছিলেন।

সংসদ সদস্য অফিস কক্ষে এসে কর্তব্যরত শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনের ওপর আকস্মিকভাবে চড়াও হন। ‘তুই শিবির করিস’ বলেই তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। অপর শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে একইভাবে হেনস্থা করতে থাকেন। তাদের আক্রমণে দুই শিক্ষকই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একই সময় মোশারফ হোসেনের কাছে খাতা চুরি মামলায় দুদক ও তদন্ত কর্মকর্তার কাগজপত্র দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আর এমপি শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে মারপিট করতে থাকেন। হামলায় সাজ্জাদ হোসেনের কানের পর্দা ফেটে যায়। পরে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আব্দুল মজিদ মণ্ডল ও রকিবুল ইসলাম মিল্টন খাতা চুরি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। তারা এমপি আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি রয়েছে।

মারধরের শিকার অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হঠাৎ এসেই শিক্ষক রুমের সবাইকে বের করে দেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমাকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে থাপ্পড় মারেন। পরপর তিনি ক্রমাগত থাপ্পড় মারেন আমাকে।

পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে থানা পুলিশকে কলেজে পাঠানো হয়। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে কলেজের একটি ফাইল নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে করা লিখিত অভিযোগ এখনও তার হাতে পৌঁছায়নি বলে জানান তিনি। এদিকে, কলেজ শিক্ষকরা নিরাপত্তার দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শিক্ষক প্রহারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় তোলপাড় ‍শুরু হয়েছে।