Lead

টিপু হত্যাকাণ্ডের আগেই গোপনে দুবাই চলে গেছে ‘সমন্বয়ক’ মুসা

 

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় মোট ১৫ লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছিল এবং মূল সমন্বয়কারী কিলার মুসা হত্যাকাণ্ডের আগেই গোপনে দুবাই চলে গেছে। সেখানে বসেই ছক কষেছে সে। রাজধানীর শাহজাহানপুরে টিপু ও প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। এসময় তার মাইক্রোবাসের পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। এ হত্যাকাণ্ডে ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করে ডিবি।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৫২), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮) ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)।

তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে শনিবার (২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য ও স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল গ্রেফতারকৃতদের। তারা টিপুর ঘনিষ্ট রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যা মামলারও আসামি। মূলত ওই মামলাটির রায় দীর্ঘায়িত করতেই টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে কিলার মুসা; যে কিনা তালিকাভুক্ত শীর্ষসন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

২০১৬ সালে সংঘটিত বোচাবাবু হত্যাকাণ্ডটি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, স্বার্থের বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে কিলার মুসার মাধ্যমেই আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের সহায়তায় বোচা বাবুকে হত্যা করা হয়েছিল। বোচা বাবু ছিলেন টিপুর সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল। সে কারণেই টিপু নিহত বাবুর বাবা এবং সেই হত্যা মামলার সাক্ষী কালামকে সহায়তা করে আসছিলেন। মামলাটির প্রায় সব সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। মামলার আসামিদের মনে ভয় ছিল, মামলাটি যদি দ্রুত গতিতে চলে তাহলে তাদের ফাঁসির রায় হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তারা টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, নাসির ও ওমর ফারুক টিপুকে হত্যা করার জন্য কিলার মুসাকে দায়িত্ব দেয়। এছাড়া কাইল্লা পলাশের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীও টিপুকে হত্যার বিষয়টি জানায়। পরে তারা এ হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট দেয়। যেখানে কিলিং মিশনে দায়িত্ব পরে মুসার ওপর। সমন্বয়কারী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে শুটার ঠিক করে সে।

এই হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে গোপনে দুবাই চলে যায় কিলার মুসা। সেখানে বসেই হত্যার ছক সাজায়। কিলার মুসা নিজেও বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামি। সেই মামলার হাজিরা থেকে বাঁচতে করোনার সনদ উপস্থাপন করে সে।

দুবাই যাওয়ার পরে মুসা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শুটার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। নাসির, ওমর ফারুক ও কাইল্লা পলাশের কাছ থেকে সব সময় আপডেট নিয়েছে মুসা।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানায়, হত্যাকাণ্ডে চুক্তিকৃত ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ৯ লাখ টাকা ওমর ফারুক দিয়েছে। বাকি ৬ লাখ টাকা মুসা নাসিরের কাছ থেকে নিয়েছে। মুসা বিদেশ যাওয়ার সময় ৫ লাখ টাকা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। পরে তার কাছে আরও চার লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়। ওমর ফারুকের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।