Lead

গবেষণায় এক পয়সাও ব্যয় করেনি ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১৪৩টি বিশ্ববিদ্যায়ের মধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কোনও অর্থ ব্যয় করেনি। অপরদিকে গবেষণায় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ইউজিসি থেকে গত ৩০ ডিসেম্বর (২০২১) প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৭২ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। আটটি বিশ্ববিদ্যালয় কোনও অর্থ ব্যয় করেনি। আর মোট ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের মধ্যে ৭৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ১১১ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।

মোট ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি ২০২০ সাল পর্যন্ত। অনুমোদন বাতিল থাকায় ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি প্রতিবেদনে। সেই হিসেবে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা মোট ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে অর্থ ব্যয় করলেও ১৯টি কোনও অর্থ ব্যয় করেনি।

গবেষণা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ এবং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় সরকারি কোনও বরাদ্দ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নের গবেষণায় ব্যয় করে।

২০২০ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এবার গবেষণায় সর্বেচ্চ ব্যয় করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় ব্যয় সামান্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়ের তালিকায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪ টাকা, জাহাঙ্গীরনগর ৩ কোটি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ২ কোটি ৩০ লাখ।

গবেষণায় সর্বোচ্চ ব্যয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

পালিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় ব্র্যাক ইউনিভিার্সিটি সর্বোচ্চ ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। সর্বোচ্চ ব্যয়ের তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমেকিান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২২ কোটি ২১ লাখ ২২ হাজার টাকা, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১২ কোটি ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭ টাকা, ৮ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, নর্থ সাউথ ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৩ কোটি ৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, ইস্ট ওয়েস্ট ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৮ টাকা।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনাক্রমে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে

ইউজিসির প্রতিবেদনে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারের ফলে গ্র্যাজুয়েটদের চতুর্থ-শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। চতুর্থ-শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বৃদ্ধিসহ চাহিদাভিত্তিক, উদ্দেশ্যমুখী এবং ফোকাস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। এর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মানসম্পন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনাক্রমে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা ও চাহিদার কথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানাতে পারবে। চাহিদার নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার পাশাপাশি উদ্ভূত সমস্যার উপায় বের করে বেবেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে। আর শিল্পপ্রতিষ্ঠান উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে পণ্যের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হবে। এ ধরনের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব বাজেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার জন্য সরকার থেকে কোনও অর্থ দেওয়া হয় না।