শিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম স্বচ্ছ ও নির্ভুল করার নির্দেশ

এসএসসি ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীসহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের চলমান অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক নিজেই মাঠ পর্যায়ে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন।

শনিবার (২৮ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ সদরের পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। পরিদর্শনের সময় শিক্ষকদের অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নে স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্দেশ দেন তিনি।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ কলেজ ও মর্গান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মহাপরিচালক। অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নে স্বচ্ছতা আনতে দ্বিতীয় পরীক্ষক দিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করানো হয়। এতে শিক্ষকদের মূল্যায়নে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষকদের কিছু অবহেলা পরিলক্ষিত হয়েছে। কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের নম্বরে কোনও হেরফের হবে না। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিষয়গুলোতে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষক অ্যাসাইনমেন্ট অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন করে, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে কোনও কারণে বেশি নম্বর দেয়; সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও শিক্ষার্থী যদি নকল করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয় সে ক্ষেত্রেও তার অ্যাসাইনমেন্ট বাতিল হবে।’

দুপুরে মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদরের মর্গান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট পুনর্মূল্যায়ন করেন দ্বিতীয় পরীক্ষক। দ্বিতীয় পরীক্ষকরা হলেন— নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সুজিত কুমার বিশ্বাস, ভূগোলের শিক্ষক নয়ণচন্দ্র পাল এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক শফিউদ্দিন আহমেদ। পুনর্মূল্যায়নের পর প্রথম পরীক্ষকের ত্রুটি বিচ্যুতি মহাপরিচালকের কাছে তুলে ধরেন।

অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসা নারায়ণগঞ্জ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রুকসাত জান্নাত বলেন, ‘আজ চতুর্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিলাম। অ্যাসাইনমেন্ট সঠিকভাবে করতে হচ্ছে। কেউ নকল করলে তার অ্যাসাইনমেন্ট বাতিল হবে সে কারণে নিজেই করছে। আমার অ্যাসাইনমেন্ট করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’

এইচএসসির চতুর্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসা দিলরুবা আক্তার বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট থাকার কারণে লেখাপড়া হচ্ছে। আমরা কলেজে আসতে পারছি। অ্যাসাইনমেন্টের পর দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া হলে ভালো হয়।’

কিছু শিক্ষার্থী বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অ্যাসাইনমেন্ট পুরোপুরি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সে কারণে নম্বর কম দেওয়া হলে সমস্যা হবে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা বলছেন, অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।

সরেজমিন পরিদর্শনে অ্যাসাইনমেন্ট পুনর্মূল্যায়নের সময় দেখা গেছে, অ্যাসাইনমেন্ট শিটে শিরোনাম ভুল, কাটাকাটি করা হলেও শ্রেণিশিক্ষক ভুল ও কাটাকাটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিয়েছেন। উত্তর সঠিক হলে কালো কালিতে আন্ডারলাইন করার কথা থাকলেও টিক চিহ্ন দিয়েছেন। উত্তর পুরোপুরি সঠিক না হলে বা ভুল হলে লাল কালিতে আন্ডারলাইন করা থাকলেও মূল্যায়নের সময় লাল কালিতে গোলাকার চিহ্ন দিয়েছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া কোনও কোনও শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টের ভেতরে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অ্যাসাইনমেন্ট অ্যাড্রেস করেছেন, যা করার প্রয়োজন ছিল না। শ্রেণিশিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার সময় তা ফেরত দিয়ে নতুন করে লিখিয়ে নিতে পারতেন, যা করা হয়নি। দ্বিতীয় পরীক্ষকরা বলছেন, রুব্রিক্স বা মূল্যায়ন নির্দেশিকা শ্রেণিশিক্ষকরা ভালো করে পড়েননি অথবা অবহেলা করেছেন।

দ্বিতীয় পরীক্ষকরা আরও বলেছেন, এসব ত্রুটি বিচ্যুতিতে শিক্ষার্থীর নম্বরে কম বেশি হবে না। তবে শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার ছিল। নিবন্ধন নম্বরের জায়গায় কাটাকাটির বিষয়েও শিক্ষকদের বেশি সচেতন থাকার পরামর্শ দেন দ্বিতীয় পরীক্ষকরা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ১২ সপ্তাহে ২৪টি এবং এইচএসসির জন্য ১৫ সপ্তাহে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে।