শিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

অসাম্প্রদায়িকতার সংগ্রামে নিরলস কাজ করেছেন শামসুজ্জামান খান: শিক্ষামন্ত্রী


একুশে পদক ও  স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক বিজয়ী এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলা একাডেমির বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এক শোক বার্তা শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান একাধারে ছিলেন লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক। আমাদের মুক্তবুদ্ধির চর্চায়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায়, বঙ্গবন্ধু চর্চায়, বাঙালীর আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে যে ক’জন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিরলস কাজ করেছেন শামসুজ্জামান খান ছিলেন তাঁদের অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর লেখা বইগুলো আমাদের অনন্য সম্পদ। আর এ বইগুলো আমাদের হাতে তুলে দিতে অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর কাছে আমরা ঋণী। বঙ্গবন্ধুকন্যার এ বিশাল কাজে তাঁর পাশে ছিলেন শামসুজ্জামান খান। আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গণের এক নির্ভরতার স্থল ছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে অপূরণীয় ক্ষতি হলো বাংলাদেশের।

শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। 

শামসুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য কাজ

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম রয়েছে বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা।

শামসুজ্জামান খান বাংলা ভাষা,  সাহিত্য-শিল্প ও সংস্কৃতিসহ জ্ঞান সাধনার এক অনুকরণীয় আদর্শ ।শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য  প্রতিভার অধিকারী। একইভাবে প্রশাসক হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন মানুষ। তিনি গত ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন।

মন্ত্রী জানান, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা (১৯৯৬-১৯৯৭); মহাপরিচালক, জাতীয় জাদুঘর (১৯৯৭-২০০১) হিসেবে প্রতিষ্ঠান দুটিতে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

মন্ত্রী জানান, শামসুজ্জামান খানের প্রকাশিত গ্রন্থ: প্রবন্ধ-গবেষণা: নানা প্রসঙ্গ (১৯৮৩); গণসঙ্গীত (যৌথ, ১৯৮৫); মাটি থেকে মহীরুহ (১৯৯৪); বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও প্রাসঙ্গিক কথকতা (১৯৯৫); আধুনিক ফোকলোর চিন্তা (২০০১); মীর মশাররফ হোসেন: নতুন তথ্যে, নতুন ভাষ্যে (২০০৪); ফোকলোর চর্চা (২০০৬); নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০০৬)। রম্য-রচনা: ঢাকাই রঙ্গরসিকতা (২০০১); গ্রাম বাংলার রঙ্গরসিকতা (২০০৪); গ্রাম বাংলার রঙ্গ গল্প (২০০৬)। শিশুসাহিত্য: দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ (১০৮৭)। জীবনী: মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৯৮৫); মওলানা মনিরুজ্জামান: এছলামাবাদী (দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ ২০০৬)। সম্পাদনা: কিশোর গল্প ‘সূর্যমুখী’ (১৯৬৭); আফ্রিকার কবিতা: লি্ওপোল্ড সেংঘর (১৯৭৭); ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থ (যৌথ, ১৯৮৫); ছোটদের অভিধান (যৌথ, ১৯৮৫); চরিতাভিধান (যৌথ, ১৯৮৫); বাংলাদেশের লোকঐতিহ্য (১৯৮৬); বাংলাদেশের লোক ঐতিহ্য (প্রথম খণ্ড, ২০০৬); Bibliography on Folklore of Bangladesh (যৌথ, ১৯৮৭); চন্দ্রকুমার দে অগ্রন্থিত রচনা (১ম খণ্ড ১৯৯৪ এবং ২য় খণ্ড ১৯৯৫); বাংলা সন ও তাঁর ঐতিহ্য (১৯৯৪); সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান (যৌথ, ১৯৯৬); ভাষা আন্দোলনের শহীদেরা (যৌথ, ১৯৯২); (Folklore of Bangladesh (Vol. 1987 & Vol-2 1989); কবি মঈনুদ্দীন স্মারকগ্রন্থ (২০০০); সুবর্ণরেখার আলপনা: আবুল আহসান চৌধুরী সংবর্ধনাগ্রন্থ (যৌথ, ২০০৩); মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী: আত্মজীবন ইত্যাদি  বাংলা ও বাঙালির সম্পদ হিসেবে যুগ থেকে যুগান্তর শামসুজ্জামান খানকে স্মরণীয় করে রাখবে।

/এসএমএ/