সব সংবাদস্পটলাইট

অবসর চান না জ্যেষ্ট নাগরিক জয়নুল আবেদিন

৬৮ বছর বয়স। তবুও নিয়মিত একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন জয়নুল আবেদিন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা প্রধান সড়কের উত্তর পাশে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিক তিনি নিজেই। ইট ভাঙা মেশিন বানানোর এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়েই চলে পুরো সংসার। সংসারে সুদিন না আসা পর্যন্ত অবসর চান না দেশের জ্যেষ্ঠ এই নাগরিক।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পরিশ্রম করতে চাই। অবসরের সুযোগ নেই, তাই অবসর চাই না।’

তিনি জানান, ছেলে জাকারিয়া চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। মেয়ে সুমাইয়া বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে অনার্স পড়ছে। তারা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেলেই তার সুদিন আসবে। এই প্রতীক্ষায় দিনরাত পরিশ্রম করেন জয়নুল আবেদিন।

কাজ করতে করতে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘এই সন্তান দুটি মানুষ করার চেষ্টাই আমার সফলতা। আর কোনও ব্যর্থতা নেই। কষ্ট আছে। ২৪ বছর বয়সী মেয়ে শায়মা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। সবাই নিজের পায়ে দাঁড়ালেও আমার বেঁচে থাকা পর্যন্ত এই মেয়েটির চিকিৎসার খরচ চালাতে হবে।’

জয়নুল আবেদিনের গল্পে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সফলতা দেখা গেলেও বেশিরভাগ প্রবীণের জীবনের গল্পের পুরোটাই ব্যর্থতায় ভরা। তবু শেষ বয়সে অবসর নেওয়ার সুযোগ নেই তাদের।

মোহাম্মদপুরের বসিলা প্রধান সড়কে সারাদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রি করেন ৬৭ বছর বয়সী আব্দুর রশিদ। বরিশালের মুলাদী উপজেলার হাসিরহাট গ্রামের প্রবীণ এই নাগরিক মানসিক অসুস্থ সন্তান ও স্ত্রী-কন্যার দায় ঘাড়ে নিতে সড়কে কাঠফাটা রোদে দিনভর দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রি করেন। মৃত্যুর আগে তার অবসর নেওয়া হবে না বলে জানান আব্দুর রশিদ।

৬৩ বছর বয়সী ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলার কামারফনি গ্রামের আব্দুস সোহান নতুন করে কাজ শুরু করেছেন দারোয়ান হিসেবে। মোহাম্মদপুরের আলী নূর রিয়েলে এস্টেটের একটি বাসায় আট হাজার টাকা বেতনে কাজ পেয়েছেন সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। আব্দুস সোবহান জানান, সংসার চালাতে এই বয়সেও তাকে কাজ করতে হচ্ছে, বাকি জীবনে অবসরের সুযোগ হয়তো মিলবে না তার।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪৯ লাখ প্রান্তিক প্রবীণ নাগরিককে সরকার মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দিচ্ছে। শহরে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা এখনও শুরু হয়নি। আর সে কারণেই রাজধানীর কর্মজীবী প্রবীণরা জানেন না সরকারি পরিকল্পনার কথা।

প্রবীণদের সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রণীত হয়েছে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩’। অথচ দেশের অনেক প্রবীণ নাগরিককে উল্টো সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করতেই শেষ বয়সে কঠোর প্ররিশ্রম করতে হচ্ছে।

‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা, ২০১৩’ অনুযায়ী প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ৬ বছর পরও রাজধানীর জ্যেষ্ঠ নাগরিকেদের কোনও সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়নি। সূত্র বাংলা ট্রিবিউন, প্রতিবেদন করেছেন এস এম আববাস।