শিক্ষা-সংস্কৃতিশীর্ষ সংবাদসব সংবাদ

ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছে ৮৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ

ঢাকা জার্নাল: ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা’র (আইএসডি)সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে নানাভাবে উত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে। কিন্তু স্কুলে অভিযোগ করে প্রতিকার পাননি শিক্ষার্থীর অভিভাবক।  উল্টো ওই শিক্ষার্থীকে স্কুল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।  এই পরিস্থিতির পর বুলিংয়ের শিকার ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনায় ৮৪ কোটি (১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার) টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর টি. জে. কোবার্নকে এই নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার হাসান এম এস আজীম।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আইএসডির প্রিন্সিপাল (পরিচালক) টি জে কোবার্নের কাছে পাঠানো নোটিশটি পাঠানো হয়েছে শিশুটির মা সালমা খানমের পক্ষে। নোটিশে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির জন্য আইএসডি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে নোটিশে। তবে এখনও স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি। নোটিশে বলা হয়, স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না নিলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, ‘আমরা এখন লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে বুলিংয়ের শিকার শিশুটির ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ী স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।  ক্ষতি পূরণের মামলা ছাড়াও বুলিং বন্ধে গাইডলাইন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে।’

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, সপ্তম শ্রেণির সহপাঠীদের উত্যক্তের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সে ওই শিক্ষার্থী। সন্তানের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই মানসিক অত্যাচার বন্ধ করার অনুরোধও জানান অভিভাবক সালমা খানম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার প্রতিকার না করে বরং নির্যাতিত শিক্ষার্থীকেই দোষারোপ করতে থাকে। এতে এক পর্যায়ে স্কুল ছাড়তেই বাধ্য করা হয়।

নোটিশে আর বলা হয়, শিক্ষার্থীর গায়ের রং, সাইজ এবং ওজন নিয়ে সহপাঠীরা উত্যক্ত করেন সপ্তম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে।

বুলিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা সালমা খানম বলেন, ২০১৭ সালে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করি আমার মেয়েকে। দুই বছর ধরে সহপাঠীদের বুলিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করলেও ঘটনার কোনও প্রতিকার না করে উল্টো আমার মেয়েকেই দোষারোপ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে ভর্তির পর একই বছর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ওই শিক্ষার্থীকে থাইল্যান্ডে শিক্ষা সফরে নিয়ে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।সেখান থেকেই শিশুটিকে তার সহপাঠিদের মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হয়।

সালমা খানম আরও বলেন, ‘তারা (সহপাঠীরা) আমার মেয়ের গায়ের রং নিয়ে বিদ্রুপ করতো, মা ফর্সা, মেয়ে কালো কেন? এমন প্রশ্ন করা হতো।  জন্মের পর হাসপাতাল থেকে আরেকজনের সন্তান পাল্টে গেছে, এমন মন্তব্য করে। এসব কারণে দিনের পর দিন আমার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এখন আমার মেয়ে ডিএনএ টেস্ট করে জানতে চায় আমরা তার মা-বাবা কি-না।’

নোটিশে বলা হয়, গত ১৪ মে স্কুলের হেড অব সেকেন্ডারি ইলডিকো -এর উপস্থিতিতে বলা হয় অষ্টম গ্রেডে উঠতে পারবে না, এবং আইএসডিতে থাকতে পারবে না।  তাকে বিদেশে কোন আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার পর শিশুটি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় উল্লেখ করে সালমা খানম বলেন, ‘মেয়ে এখন পরিবারে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, অস্বাভাবিক আচরণ করছে এবং আত্মহত্যার জন্যেও হুমকি দিচ্ছে।’

স্কুলটির পরিবেশ উল্লেখ করে সালমা খানম বলেন, ‘স্কুলটিতে না বাংলা কালচার শেকানো হয়, না আমেরিকান কালচার শেখানো হয়। ষষ্ট ষ্রেণিতে স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দেওয়া হয়, অশালীন সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে যাচ্ছে শিশুরা। আমার বাচ্চাকে স্মার্ট ফোন দিচ্ছি না।  আমার মেয়েকে স্মার্ট ফোন চায়। শিশুদের চরিত্র নষ্ট করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এই অভিযোগ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর টি. জে. কোবার্ন ফোন রিসিভ করেননি।  

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২২, ২০১৯