Leadসব সংবাদ

দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ গণপেূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে

গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টেন্ডার বাণিজ্য করে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দেশে- বিদেশে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও দেশের বাইরে অর্থপাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এই অভিযোগ করেছেন প্রকৌশলী ফজলে রাব্বী লিংকন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়েছেন দুদক সচিব শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। দুদকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এর আগে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কড়াইল বস্তি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নে অনিয়ম-দুরœীতির অভিযোগ ওঠে। জমির দাম কম দেখিয়ে ডিপিপি প্রণয়ন করে তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন প্রধান প্রক্যেশলী। এই অভিযোগে ওঠার পর দুদকে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার তার বিরুদ্ধে।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে প্রকৌশলী লিংকন বলেন, ‘টেন্ডার বাণিজ্য করে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। টেন্ডারে প্রধান প্রকৌশলী ৩ শতাংশ ঠিকাদারদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
দুদকে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান প্রকৌশলীর পদটি ধরে রাখতে রফিকুল ঘুষ লেনদেনে জড়িত হন। অভিযোগ, ২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে বর্তমান পদে বসেছেন তিনি। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, রফিকুল ইসলাম তিন মাস আগে গণপূর্ত সচিব এবং তার স্ত্রীসহ একাধিক বার বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে কোটি টাকা দামের ডায়মন্ডের নেকলেস সচিবের (গণপূর্ত সচিব) স্ত্রীকে উপহার দেন। এছাড়া সচিব এবং মন্ত্রীর জন্য সংগ্রহ করা টাকা বিদেশে গিয়ে ডলারের মাধ্যমে সচিব এবং মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রীকে ২০ কোটি এবং সচিবকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ডিও লেটারে সুপারিশ নিয়েছেন। অর্থ বিনিময়ের মূল কারণ কমপক্ষে আরও দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া। পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য রফিকুল কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও ওই অভিযোগে বলা হয়েছে।
দুদকে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, কানাডায় অবস্থানরত ছেলের মাধ্যমে বিদেশে ডলার পাঠাতে সহযোগিতা না করায় গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম সার্কেল-৩ এর (শেরে বাংলা নগর অঞ্চল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মানসিকভাবে নির্যাতন করায় তিনি প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের রুমেই স্ট্রোক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিষয়টি চিৎকার করে হাসেমের স্ত্রী হাসপাতালের সবাইকে জানাতে চাইলে রফিকুল ইসলাম পেনশনের টাকা না পাওয়ার হুমকি দিয়ে হাসেমের স্ত্রীকে থামিয়ে রাখেন।
রফিকুলের বিরুদ্ধে কানাডায় নিকট আত্মীয়ের নামে বাড়ি কেনারও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, রফিকুল ইসলাম তার প্রথম ঘরের স্ত্রীর ছেলে শাওনের মাধ্যমে হংকংয়ের এইচএসবিসি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা জমা রাখেন। দুর্নীতি ও অনিয়ম করেন রফিকুল ইসলাম শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রফিকুলের নামে ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানমন্ডির ৮নং রোডে হাউজ নং-৯, রাজধানীর গ্রিনরোডের গ্রিন কর্ণার নামের অ্যাপার্টমেন্টে আলিশান দুটি ফ্ল্যাট, গুলশানের ৩৫ নং রোডে ৪৪ নং বাড়িতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং বনানীর ৭ নং রোডে এফ/১৭ আনোয়ার মঞ্জিল নামে একটি বাড়ি রয়েছে।
এছাড়া মিরপুরে ১০ কাঠা জমির উপর ১২টি ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ছয় তলা বাড়ির মালিকও তিনি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রতিটি বড় বড় কাজের টেন্ডার থেকে ‘নেগোশিয়েশন মানি’ হিসেবে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গণপুর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রধান প্রকৌশলী যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে সংসদ সচিবালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। গোলাম আজমের সুপারিশে বিএনপি সরকারের গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করেন রফিকুল ইসলাম। জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী ও কোরবানির ঈদে মির্জা আব্বাসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গরু সরবরাহকারী হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতরে তার ব্যাপক পরিচিতিও রয়েছে তার।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১৪, ২০১৮।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.