কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদ পেতে মরিয়া বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা
ঢাকা জার্নাল: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে জোর লবিং-তদবির শুরু করেছে বর্তমান কমিটির বিতর্কিত পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বিপ্লব। তার বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ছাত্রদল করার অভিযোগ রয়েছে। তার পরিবারও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, হাবিবুল্লাহ বিপ্লব ২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ৫ই জানুয়ারীর আগে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এই আশায় ছাত্রদলের রাজনীতিতে আরো বেশী সক্রিয় হয়।ছাত্রদলের নিউক্লাস খ্যাত সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু পন্থীদের সাথে নিয়মিত টুকুর বাসায় যাতায়াত করেন।সেসময় টুকু পন্থী ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের সাথে মিছিল বিভিন্ন মিছিল, মিটিংয়ে অংশ গ্রহন করে। সেকারনে মুহসীন হল থেকে নেমে গিয়ে আজিমপুরে একটি মেসে উঠে।কিন্তু ৫ই জানুয়ারীর পর যখন বুঝতে পারল বিএনপি ক্ষমতায় আসছেনা তখন খোলস পাল্টে ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ নেতা হবার চেষ্টা করতে থাকেন। তৎকালীন ছাত্রলীগের পরিবেশ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।আর সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হবার পরই রাতারাতি ছাত্রলীগ নেতা বনে যান হাবিবুল্লাহ বিপ্লব।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগের দিন সাইফুর রহমান সোহাগের রেফারেন্সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌখিক সহ-সভাপতি হন।অথচ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে হল ছাত্রলীগে তার কোন পদ ছিল না। নির্বাচনের আগে হল কমিটি পূ্র্ণাঙ্গ করতে ৫১জন ছাত্রলীগ কর্মী পাওয়া যেতনা বলে তৎকালিন অনেক হলের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুহসিন হাল শাখা ছাত্রলীগের একদিক নেতা জানান, বিপ্লবকে সবাই ছাত্রদল কর্মী ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারি বলেই চিনতো। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে মেসে থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতো। তবে নির্বাচনে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেও রাতারাতি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে থাকেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদল কর্মী থেকে ছাত্রলীগের পরিবেশ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বিপ্লব পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে হাতেখড়ি।স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।২০০৫ সালে টাংগাইলের সখিপুর পৌর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।আর তার রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তনের সাথে তার পরিবারের সবার রাজনৈতিক পরিচয়ও পরিবর্তনের জন্য উঠে পড়ে লাগে।অথচ তার পরিবার সবসময় বিএনপির ভোটব্যাংক বলে পরিচিত ছিল।তার বাবা এ.কে.এম সাইফুল্লাহ পেশায় একজন শিক্ষক।তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্যানেলে নির্বাচনও করেছিলেন।বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নাই জেনে দলের সুসময়ে তিনিও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
বিপ্লবের চাচা পিয়ার মাহমুদ ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক নেতা,বতর্মানে সে ইউনিয়ন বিএনপির সক্রিয় সদস্য,তার আরেক চাচা ইয়ার মাহমুদ বিএনপি সমর্থক। অপর দুই চাচা সামছু উদ্দিন ও সুমেজ বর্তমানেও কৃষক,শ্রমিক জনতা লীগের সমর্থক। তার তার আপন খালু বাবুল সখিপুর উপজেলা যুবদলের সিনিয়ার সহ সভাপতি ছিলো। সেই খালুর বাসায় থেকেই বিপ্লব সখিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করেছে।
এ ব্যাপারে সখিপুর উপজেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সওকত সিকদার বলেন, বিপ্লবের পরিবার কখনও আওয়ামী রাজনীতি করতো না। বাবা-চাচাদের মত তার মামারাও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে বর্তমানে অনেকেই আওয়ামী লীগে ভিড়ার চেষ্টে করছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ বিপ্লবের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের গনমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, প্রকৃত পরিচয় গোপন করে এসব ব্যক্তি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, পরে সেগুলো সামনে আসে।
২৯ তম সম্মেলনের আগে অনুপ্রবেশকারীদের অপতৎপরতা ডোবাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। অন্য ছাত্র সংগঠন থেকে অনেকেই যোগ দিচ্ছে ছাত্রলীগে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামাত-শিবির থেকে বিপুল পরিমাণে অনুপ্রবেশকারী যোগ দিচ্ছে ছাত্রলীগে। শুধু তাই নয়, এমনকি তাদেরকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। আর এনিয়ে আবারও আলোচনার শীর্ষে সংগঠনটি।
এদিকে ছাত্রলীগে আশঙ্কাজনক হাড়ে শিবির-ছাত্রদলের অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তোলছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডকে।সেই সাথে বর্তমান কমিটির ক্লিন ইমেজ নেতারাও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সব দিক বিবেচনায় ইলেকশন বা নির্বাচন নয় বরং সিলেকশন বা বাছাই পদ্ধতিতে ছাত্রলীগের পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বচনের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ‘নেতৃত্ব নির্বাচন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে কোনো প্রার্থীর নাম প্রস্তাব ও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মেধা- এসব বিবেচনায় নিয়ে সিলেকশন পদ্ধতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে।নেতা বানানো হবে জীবনবৃত্তান্ত দেখে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।’
প্রসঙ্গত, কয়েক দফা পেছানোর পর আগামী মে মাসের ১১ ও ১২ তারিখ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু নেতা নির্বাচন এখনও আটকে আছে।