চাকরি ঝুলে আছে ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের
ঢাকা জার্নাল : নিয়োগ পেয়েও প্রত্যায়নপত্র না পাওয়ায় চাকরিতে যোগদান করতে পারছেন না দেশের ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এদের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার রয়েছে পুলিশে নিয়োগ পাওয়া। আর বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পদে মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, পরিদফতরে নিয়োগ পাওয়া রয়েছেন আরো প্রায় ৮ হাজার।
তবে মুক্তিযোদ্ধা সচিব এম এ হান্নান বলেন, এ সংখ্যা আরো কিছু কম হবে। তিনি জানান, পুলিশে নিয়োগ পাওয়া রয়েছেন ৭ থেকে ৮ হাজারের মতো। আর ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার মিলিয়ে বিভিন্ন পদে রয়েছেন আরো ৫ হাজারের মতো (সব মিলিয়ে প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজারের মতো)। আর দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে সচিব বলেন, সবকিছু দেখতে হয়, সার্টিফিকেট যাচাই করতে হয়, সে কারণে দেরি হচ্ছে।
তবে এ বিষয়টি মানতে নারাজ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। তাদের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অবহেলা এবং অদক্ষতার জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত ঘুরছে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের।
এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। আর দুর্নীতি, অবহেলা এবং অদক্ষতা রয়েছে বেশ কিছু কর্মকর্তার। যার কারণেই দেরি হচ্ছে প্রত্যয়নপত্র দিতে। এতে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েও এই বিপুল সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধের সন্তান চাকরিতে যোগদান করতে পারছেন না শুধুমাত্র প্রত্যয়নপত্র না পাওয়ায়। প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন ঘুরছেন মন্ত্রণালয়ের সেকশনে সেকশনে। এই অপেক্ষা চলছে ছয়মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত।
বিসিএস ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচের মফিজের (ছদ্দ নাম) চাকরি হয়েছে ২০১৪ সালে। দুই বছর আগে চাকরি পেলেও শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যয়ন না পাওয়ায় চাকরিতে যোগদান করতে পারছেন না। মন্ত্রণালয়ে ঘুরছেন দিনের পর দিন।
মফিজ বলেন, দ্রুত প্রত্যয়নপত্র পেলে অন্তত চাকরিতে যোগ দিতে পারবো। যদিও অন্যাদের চেয়ে চাকরিতে দুই বছর পিছিয়ে থাকবো।
সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জনিয়ার পদে ওয়াসায় নিয়োগ পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ১৬ মাস ঘুরে সাময়িক প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করলেও চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি। সাময়িক প্রত্যায়নপত্র দিয়ে সেখানে যোগদানের কোনো সুযোগ নেই। তাই আবারও ঘুরছেন মন্ত্রণালয়ের সেকশনে সেকশনে।
নন ক্যাডার প্রথম শেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সহকারি পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ৮ মাস ঘুরে একটি বিশেষ সংস্থার তদবিরে অবশেষে প্রত্যায়নপত্র পেয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তবে এই ব্যক্তির সব কাজ শেষ হওয়ার পরেও সিনিয়র সহকারি সচিব রফিকুল হকের টেবিলে আটকে ছিল ফাইল। আর তা উদ্ধার করতে লেগেছে পুরো এক মাস।
এভাবে ছয়মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষার যন্ত্রণা নিয়ে প্রায় ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ঘুরছেন প্রত্যয়নপত্রের জন্য।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অভিযোগ কর্মকর্তাদের অবহেলা, সুযোগের অপেক্ষায় ফাইল আটেকে রাখছেন যাচাই বাছাইয়ের নামে। নিম্নপদের ক্ষেত্রে যারা রফিকুলকে সন্তুষ্টু করতে পেরেছেন তারা প্রত্যয়নপত্র পেয়েছেন। আর যারা সন্তুষ্টু করতে পারেননি, তারাই দিন মাস বছর পার করছেন প্রত্যায়নপত্র পাওয়ার জন্য।
তারা জানান, সিনিয়র সহকারি সচিব রফিকুল হকের টেবিলে এখনও আটকে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ফাইল। সিরিয়াল অনুযায়ী দেওয়ার নাম করে সুবিধা পাওয়ার আশায় ফাইল ধরে রেখেছেন।
এই কর্মকর্তাকে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বদলি করে দিলেও তিনি সেখানে যাচ্ছেন না। উল্টো সবিচের কাছে তদবির করেছেন এখানে থাকার জন্য।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল হক বলেন, আমি দ্রুত করার চেষ্টা করছি। কেনো তার টেবিলে দীর্ঘদিন ফাইল আটকে থাকছে তার কোনো জবাব দেননি। বদলি হওয়ার পরে বদলি করা স্থানে যোগদান করছেন না কোনো তার কোনো জবাব নেই তার কাছে।
বিভিন্ন এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, লোকবল কম থাকায় দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে।
রফিকুল হকের বদলি স্থানে যোগদানের বিষয়ে সচিব জানান, আমাদের লোকবল কম, আর কেউ আসতেও চায়না এখানে। তাই এখনও আছেন রফিকুল হক।
পুলিশে ৮ হাজেরর পুরোটাই আটকে আছে কোনো জানতে চাইলে সচিব বলেন, পুলিশের ৭ থেকে আট হাজারের মতো রয়েছে। তাদের বলেছি, ওরা যদি একটা ফরমেট ঠিক করে দেয় তাহলে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।
ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ২১, ২০১৬।