দুঃখিত মা, তোমার পাশে দাঁড়াতে পারলাম না
ঢাকা জার্নাল : সাখাওয়াত আল আমিন দেশের মূল স্রোতধারার জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজের রিপোর্টার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশপাশি সাংবাদিকতা করে আসছেন। বর্তমানে স্টাফ রিপোর্টারা হিসেবে কাজ করছেন। নিরহংকার, ভদ্র উদার মানসিকতার এই যুবক নিরবে সাংবাদিকতা করেন নিষ্টার সঙ্গে।
সাখাওয়াত আল আমিন গ্রামের ছেলে হলেও জীবনে গ্রাম্য সমাজের কুতসিৎ অনেক বিষয়ই দেখা হয়নি। তবে সাংবাদিকতার মতো পেশায় থেকেই তাকেই সমাজের নোংরা বাস্তবতার শিকার হতে হলো। তার চেয়ে বড় কষ্টকর পরিস্থিতি সামনে ঘটার আশঙ্কায় এখন প্রতিদিন দিন ও রাত কাটাচ্ছেন।
রাজধানীতে সুস্থ হয়ে উঠার অপেক্ষায় দিন পার করতে করতে তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় শিওরে উঠছেন বার বার। তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং পুলিশের নির্লিপ্ততা শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
আমি মরলে ইস্যু হবে, তার আগে আমার পরিবারের সবাই মরবে….
দুঃখিত মা, তোমার পাশে দাঁড়াতে পারলাম না, আমি চুড়ান্তভাবে অসহায়…আমি যখন আমার হলে বসে এই লেখা লিখছি তখন আমার মাকে আঘাতের পর আঘাত করে পুলিশ তুলে নিয়েছে। আমার বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। আমি শুধু শুনছি আর নিরবে চোখের পানি ফেলছি। আমার করার কিছুই যে নাই, আমি বড় অসহায়…
সেদিন হত্যার উদ্দেশ্যেই আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অজস্র কোপসহ একটি গুলিও করেছে আমার পায়ে। ভেঙ্গে ফেলেছে আমার বাম পা টি। আড়াই মাস ঢামেক ও ঢাবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে হলে ফিরলেও এখনও আমি ঠিকমত হাটতে পারি না। আমার মা তখনও আমার সঙ্গে ছিল। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রায় আমার সমান আঘাতই পেয়েছিলেন তিনি।
মৃত্যুর পথযাত্রী দাদীকে দেখতে গিয়ে আমি নিজেই সেদিন মৃত্যুর মুখে পড়েছিলাম। অথচ আমার বিশ্বাসই হয় নি যে আমার গ্রামের লোকজন আমার ওপরে এভাবে হামলা করতে পারে! কারন ২০০৮ সালে ঢাকায় ভর্তি হওয়ার পর আমি ঈদ ছাড়া কখনও বাড়ি যাইনি। গ্রামের আপণ পর ভেদাভেদ ভুলে সবাই আমাকে ভালোবাসে বলেই বিশ্বাস ছিল। তাইতো, মায়ের বারণ সত্ত্বেয় বাড়িতে গিয়ে সে বিশ্বাস দুমরে মুচরে দিয়ে আমাকে একা পেয়ে হামলে পড়লো গ্রামেরই একদল হায়েনা।
এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিয়ে আমার ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছিল থানায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতারে আগ্রহ দেখায়নি পুলিশ। কাউন্টার মামলায় জেলও খাটতে হয়েছে আমার ভাইকে।
ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হবে এবং গ্রামের লোকজন আবার মিলেমিশে যাবে এই আশায় সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেয় কাউকেই বিষয়টা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে অনুরোধ করিনি। এমনকি আমার নিজের প্রতিষ্ঠানকেও না।
কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় থাকা হায়েনারা আজ ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধ হার্টের রোগীর স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘হত্যা’ হিসেবে প্রচার করে লুটপাট শুরু করেছে আমাদের গোত্রের লোকজনের বাড়িঘর।
মৃত ব্যক্তি যে হৃদরোগী ছিল সেকথা স্বীকার করেছে তার সন্তান ও আত্মীয়রা। কিন্তু ভয়ভীতী দেখিয়ে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে, হত্যা হয়েছে মর্মে জবানবন্দি দিতে।
তারপরেও একটা ঘটনা যেহেতু ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাক।
আমরা দুইভাই ঢাকায় থাকি। এক ভাই যে বাড়িতে থাকেন আক্রোশ মূলত তার ওপরেই কিন্তু তিনিও আজ ছিলেন না গ্রামে। পুলিশ বাড়িতে গেলো, কাউকেই না পেয়ে ইচ্ছেমত ভাঙচুর করলো আমাদের ঘরের সমস্ত আসবাব।মারধর করে তুলে নিয়ে গেলো আমার মাকে!
আমি চাই না বিপদের মুহুর্তে আমার পাশে কেউ সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসুক। আমি চাই সত্য ঘটনা প্রকাশ পাক।
সাখাওয়াত আল আমিন
416, কবি জসীম উদদীন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১/৪/২০১৬
ঢাকা জার্নাল ০২, ২০১৬।