২০ মার্চ দুই মন্ত্রীকে ফের হাজিরের নির্দেশ
ঢাকা জার্নাল: প্রধান বিচারপতি এবং বিচারাধীন বিষয় বিরূপ মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত অবমাননার অভিযোগে উচ্চ আদালতের তলবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হাজিরা দিয়েছেন। এসময় আদালত একই অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের উপস্থিতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিদেশ আছেন বলে আদালতকে জানান তার আইনজীবী।
পরে আদালত দুই মন্ত্রীকে আগামী ২০ মার্চ (রোববার) হাজির থাকতে নির্দেশ দেন।
অাদালতে মোজাম্মেল হকের পক্ষে ছিলে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। কামরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আবদুল বাসেত মজুমদার।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাজির হন আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গত ০৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে নয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ জারি করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে সরকারের এ দুই মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
সরকারের দুই মন্ত্রীকে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অন্যদিকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয় সোমবারের (১৪ মার্চ) মধ্যে।
নোটিশে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা দুই মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন আপিল বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সূত্র জানায়, সোমবার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশের জবাব দাখিল করেছেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের পক্ষে তার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শিরিন আফরোজ। তিনি বিদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকায় মঙ্গলবার সশরীরে হাজির থাকতে পারছেন না জানিয়ে এজন্য এক সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন পৃথক এক আবেদনে।
এছাড়া আ ক ম মোজাম্মেল হক তার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড চৌধুরী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশের জবাব দাখিল করেছেন।
গত ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইমলাম।
তিনি বলেন, ‘এ মামলার রায় কী হবে তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি যে, এ মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই’।
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও যদি মামলার রায়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, তাহলে সবাই ভাববে, সরকার চাপ দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। তাই আমি দাবি জানাচ্ছি যে, প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করা হোক’।
কামরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে ৪৫ বছরে অনেক বিচারপতি এসেছেন ও গেছেন, কিন্তু কেউ তার মতো এত অতিবক্তব্য দেননি। তার অতিকথনে সুধী সমাজের মানুষরা জিহ্বায় কামড় দিচ্ছেন। তাই তাকে অতিকথন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর তা না হলে সরকারকে নতুন করে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা উচিত বলে আমি মনে করছি’।
সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এ রায় নিয়ে যে শঙ্কা এখন একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। তবে এই সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। সংকট সৃষ্টি করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ।’
রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি যদি এমন কথা বলেন তাহলে জাতি কোথায় যাবে বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তলবাদেশ ও নোটিশ জারির সময় সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘গণমাধ্যমে তাদের যে সমস্ত বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে তা অশোভন ও অবমাননাকর। এ বক্তব্যগুলোতে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা স্তম্ভিত। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে মনে করি’।
ঢাকা জার্নাল,মার্চ১৫, ২০১৬।