‘দৃষ্টি দিতে হবে নতুন পণ্যবাজারে’
রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির জন্য তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন পণ্যবাজার তৈরির পরামর্শ এসেছে এক সেমিনারে।
রোববার বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট-২০১৬ এর ওই সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নতুন পণ্যের বাজার তৈরি হলে বিনিয়োগ বাড়বে; সেই সঙ্গে বাড়বে আয় ও কর্মসংস্থান।
‘অপরচুনিটিজ ফর কমপিটিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং’ শীর্ষক ওই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) স্ট্রাটেজি ম্যানুফ্যাকচারিং, অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড সার্ভিসের প্রধান জেমস এমারি।
জেমস এমারি বলেন, “বাংলাদেশের জিডিপিতে উৎপাদনশীল খাতে অবদান বাড়ছে; এটা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের যে দর্শন নিয়েছে তা অর্জনে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
বাংলাদেশ চীনা উদ্যোক্তাদের সহজে আকৃষ্ট করতে পারে বলে মনে করেন এই বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “চীনের শ্রমমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ওই দেশটির উদ্যোক্তারা কম শ্রম মূল্যের দেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে, এই সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ।”
এ প্রসঙ্গে তিনি ভিয়েতনামের উদহারণ তুলে ধরে বলেন, “বিনিয়োগে বহুমুখীকরণের ফলে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে। ১৯৯৫ সালে ভিয়েতনামের ৩০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করত, যা ২০১৪ সালে এসে ১৪৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশও এভাবে এগোতে পারে, কারণ ব্র্যান্ডিংয়ের কাজটা ইতোমধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে হয়েছে।”
উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়লে প্রকৃত আয় বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এজন্য আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ অনুকূল নীতি প্রণয়ন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরি, দক্ষ শ্রমশক্তি সৃষ্টি, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বাড়ানো এবং সহজ অর্থায়ন ব্যবস্থা (এক্সেস টু ফাইন্যান্স) রাখার পরামর্শ দেন আইএফসির এই কর্মকর্তারা।
তবে এসব ‘বেশ চ্যালেঞ্জিং’ বলেও তার মন্তব্য।
জেমস এমারি মনে করেন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া, জাহাজ, ইলেকট্রনিক্স, রাসায়নিক, মেশিনারিজ ও বিল্ডিং মেটেরিয়াল খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সেমিনারে শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, “খাত ভিত্তিক শিল্পায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষকরে চামড়া, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে নানান সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”
“আমরা ইতোমধ্যে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছি। আগামীতে ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডসের জন্য আলাদা একটি শিল্পাঞ্চল করা হবে, যেখানে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপনের সুযোগ পাবেন।”
“এছাড়া ওষুধ শিল্পের জন্যও আলাদা পার্ক করা হচ্ছে।”
প্রাণ গ্রুপের ডিএমডি আহসান খান বলেন, “কৃষিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, আরও এগোনোর সুযোগ রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের জন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে।”
“বাংলাদেশে যত মানুষ বসবাস করে পুরো ইউরোপের অর্ধেক দেশগুলোতে সেই পরিমাণ মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশের কৃষকরা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ এই বিশাল চাহিদা পূরণ করে রপ্তানির জন্য খাদ্য উৎপাদন করছে” বলেন আহসান।
বাংলাদেশের কৃষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এদেশের কৃষকরা অনেক উদ্ভাবনী ও সহিষ্ণু। কৃষকরা নিজেরাই চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে কৃষকদের নানান সুবিধা দেওয়ার পরেও তারা ভালো উৎপাদন করতে পারছে না। কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে।”
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ দরকার। এজন্য দরকার নীতিনির্ধারণী উদ্যোগ।”
“বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই শিল্পের কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও খাদ্যের কারণে বাংলাদেশের পশুর চামড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের চামড়ার তুলনায় ভালো। যে কারণে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদাও অনেক বেশি।”
লি অ্যান্ড ফাং বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ইয়ং বলেন, “লি অ্যান্ড ফাং বাংলাদেশে ২৭ বছর ধরে আছে। আগামীতে থাকবে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশ নিয়মিত ভালো করছে। তা না হলে এরকম একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড দীর্ঘদিন থাকে না।”
“তৈরি পোশাক খাতেই বাংলাদেশ আরও নতুনত্ব আনতে পারে।”
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিল্ডের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম।