সংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

পদ্মার মতো চ্যালেঞ্জ কি জলবায়ুতেও নেবেন- হাসিনাকে প্রশ্ন রেহমান সোবহানের

তিনি বলেছেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করে একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে জিতেছেন।

“এমতাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গঠিত তহবিল থেকে যদি দাতারা অর্থছাড় না করে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রেও একই চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন?”

বঙ্গবন্ধু সরকার আমলে গঠিত প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান বর্তমানে সিপিডির চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সিপিডির বার্ষিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, কূটনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু তৈরির এক-তৃতীয়াংশ অর্থের জোগান বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনে তাদের ‘না’ বলে দেয় সরকার।

নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলছেন, ওই চ্যালেঞ্জ জিতে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশও পারে।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী ১৫ বছরে ৩ লাখ কোটি টাকা লাগবে বলে এক গবেষক সম্প্রতি হিসাব দিয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সহায়তায় আন্তর্জাতিক একটি তহবিল গড়ার উদ্যোগ বিশ্বনেতারা নিলেও প্রতিশ্রুত অর্থ এখন ছাড় করেনি শিল্পোন্নত দেশগুলো।

সিপিডির অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নলেজ নেটওয়ার্ক (সিডিকেএন) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান সাইমন ম্যাক্সওয়েল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানত তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- সঠিক নেতৃত্ব, নীতি প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।

“বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে দরকষাকষির মাধ্যমে তহবিল ছাড় করতে দরকার সঠিক নেতৃত্ব। সেই তহবিল ব্যয় করে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে দরকার সঠিক নীতি প্রণয়ণ ও তা বাস্তবায়ন।”

গত মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনকে সফল দাবি করে সাইমন বলেন, এতে বিশ্বের অন্তত ১৮৫টি দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে।

নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ নিয়েও আলোচনা হয়।

রেহমান সোবহান বলেন, গত ৩০ বছর ধরে সিপিডি বুড়িগঙ্গা নদী দূষণমুক্ত করার দাবি জানিয়ে এলেও দূষণ এখনও বন্ধ করা হচ্ছে না। হাজারীবাগের ট্যানারির বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য গিয়ে এ নদী দূষণ করছে।

“এখন আমরা আরেকটি নাটক দেখছি, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরানো নিয়ে। এখনও এ শিল্প সরানো যাচ্ছে না।”

ঢাকা শহর ঘিরে থাকা সব নদী-খাল ও জলাশয় দখল করে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে অভিযোগ করেন রেহমান সোবহান।

অনুষ্ঠানে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানো, বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা ও ঢাকা শহরের জলাশয়-খাল দখল করে গড়ে ওঠা আবাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.