Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

পদ্মা সেতুতে শিক্ষা দিয়েছি, আর কেউ অবহেলা করবে না

07মিথ্যা অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর নিজেদের টাকায় স্বপ্নের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই ‘শিক্ষা’র পর আর কেউ বাংলাদেশকে অবহেলা করতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা চাই এই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর কেউ যেন আমাদের অবহেলা দেখাতে না পারে। আমার মনে হয়, তা আর কেউ দেখাবে না। কারণ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সে শিক্ষা তারা পেয়ে গেছে।’ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এ জন্য যে যখন একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তারা (বিশ্বব্যাংক) টাকা প্রত্যাহার করে নিল এবং আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলাম, সে সময় জনগণের বিপুল সাড়া পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা এই অবস্থায় থাকতে চাই না। আমরা যুদ্ধজয়ী জাতি, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই।

আমি মনে করি, সে শক্তি আমাদের রয়েছে। আমাদের দেশের জনগণ ও বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি মেধাসম্পন্ন।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের যুবসমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে সরকারি সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। যেখানে জমি পাবে তাতে আবাদ করতে হবে। এ কাজে দেশের যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, তাদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তারা যেন উদ্যাক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে তারা কর্মসংস্থান ব্যবস্থা গড়ে তুলে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ১০০টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ২৪টির জন্য ইতিমধ্যে জায়গা দেখা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, এসব অঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াকরণশিল্প গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবেন। তখন আর বাংলাদেশ গরিব থাকবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, “কৃষি উত্পাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠন করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ক্ষমতাসীনরা জাতির পিতার এসব উদ্যোগকে বারবার ব্যাহত করে। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা তা পুনঃপ্রবর্তন করি।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাত বছরে ভর্তুকি বাবদ মোট ৫১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

কৃষকের মধ্যে বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণের জন্য বিগত সাত বছরে প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি হিসেবে ৪৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। চলমান ২০১৬-২০২০ মেয়াদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উদ্বৃত্ত ফসল প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে আমরা একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এতে কৃষকও তাঁদের উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, সারা বিশ্বে এখন অর্গানিক খাদ্যের বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারি।

কারণ অর্গানিক খাদ্যের দাম রাসায়নিক সার দিয়ে উত্পাদিত খাদ্যের দামের চেয়ে অনেক বেশি।’ তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে মসলা চাষের মাধ্যমে নিজেদের এবং দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু কৃষি জাতীয় পুরস্কার তহবিল বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। অনুষ্ঠানে ৩২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০ প্রদান করা হয়। পাঁচটি স্বর্ণ, ৯টি রৌপ্য ও ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হচ্ছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুর (ইআরআরআই), মোসাম্মৎ নুরুন্নাহার বেগম, মো. আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার, নিভা রানী বিশ্বাস ও শক্তি কীর্তনিয়া। সূত্র : বাসস

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.