নাইকো মামলা ও শেভরনের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ
নাইকোর সঙ্গে মামলায় টালবাহানা বন্ধ এবং শেভরনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সোমবার কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। টেংরাটিলায় বিস্ফোরণে গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট করেও কয়েক বছর ধরে নাইকোর ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক মামলায় বাংলাদেশ সরকারের সন্দেহজনক গাফিলতি প্রসঙ্গে বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। বিবৃতিতে তারা বলেন, টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুটো বিস্ফোরণ ঘটে। কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হলে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন মতে তার পরিমাণ ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স-নাইকোর প্রতিবেদন মতে ২৬৮ বিসিএফ গ্যাস চিরতরে হারাবে বাংলাদেশ। এই পরিমাণ গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ীই ক্ষতিপূরণ দাবি করা উচিৎ। অথচ ক্ষতিপূরণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে এর পঁচিশ ভাগের এক ভাগেরও কম। উপরন্তু সেই মামলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল ও তথ্যযুক্তি প্রদানে একের পর এক গাফিলতির কারণে কানাডার আদালতে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও নাইকো বাংলাদেশের কাছে তার দায় পুরোপুরি অস্বীকার করছে এবং উল্টো অর্থ দাবি করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এর আগে অক্সিডেন্টাল কোম্পানির অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন সিলেটের ১৪ নম্বর ব্লকের সুরমা বেসিনে মাগুড়ছড়ায় গ্যাস কূপ খননকালে ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির রক্ষণশীল হিসাবেও প্রায় ২৪৫ বিসিএফ বা বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদের এবং পুরোটা পরিমাপযোগ্য নয়। ১৯৯৯ সালে ইউনোক্যাল নামে আরেকটি মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। মাগুড়ছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ফয়সালা না করেই পরবর্তীকালে ইউনোক্যালের ব্যবসা গ্রহণ করেছে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি শেভরন। এখন এই কোম্পানির কাছ থেকেই আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে।
তারা বলেন, গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুতের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের গড় দাম বিবেচনায় মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদসহ ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা দুটো পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়ের সমান। শেভরনের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে পাওনা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো এখনও তাদের নানারকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আর কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর কাছ থেকে একদিকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটা হাস্যকর রকম কম অংকের টাকা দাবি করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেই মামলা পরিচালনাতেও ইচ্ছাকৃত গাফিলতি করে কোম্পানির স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে।অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের সমুদয় অর্থ আদায়ে সবরকম উদ্যোগ গ্রহণ এবং এই অর্থ জ্বালানি খাতের সক্ষমতা বিকাশসহ দেশের উন্নয়নে ব্যবহারের জোর দাবি জানান তারা।