Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ৯ নারী রাষ্ট্রদূত ‍

23ঢাকা: নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী কর্মতৎপরতা প্রচারে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে যৌথ নিবন্ধ লিখেছেন ব‍াংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের নারী রাষ্ট্রদূতরা।

মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে নারী রাষ্ট্রদূতরা বলেন, নয়টি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশে নিযুক্ত নয় জাতির নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমরা অবশ্যই অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করছি।  তবুও আমরা এ ব্যাপারে একমত যে সারা বিশ্বে, আমাদের দেশে এবং বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়া ও এর প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা জরুরি ভিত্তিতে আমলে নেওয়া উচিত।

গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা (জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স-জিবিভি) ভয়ানক আকারে সারা বিশ্বে বিস্তৃত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী জীবনে তার সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০১১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ভাগ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন।

‘আমরা সবাই এর প্রতিরোধে কিছু করতে পারি।’

নারীর প্রতি সহিংসতা সব সম্প্রদায়ের ওপর হুমকিস্বরূপ, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে এবং সহিংসতা ও দ্বন্দ্বকে উস্কে দেয়।

বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীর প্রতি সহিংসতার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব রয়েছে।  এরমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়, নারীদের আয়ের উৎস হারানো,  উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং বংশ পরম্পরায় নেতিবাচক প্রভাব অন্যতম।

জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএন উইমেন’ এর তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে সমষ্টিগতভাবে ক্যান্সার, সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া এবং যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও সহিংসতার কারণে অধিকতর মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতা বরণ করে নিতে হয়।

সঙ্গীর কাছ থেকে সহিংসতার শিকার হওয়া থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি এবং জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বহু ধরন রয়েছে।

সহিংসতা যে রকমই হোক, তা আমাদের সামগ্রিক মানবতার জন্য কলঙ্ক, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাধা এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। সহিংসতা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং আমরা প্রত্যেকেই এটি বন্ধের জন্য কাজ করতে পারি।

‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা’ সবার জন্য এ ব্যাপারে কাজ করার একটি সুযোগ।

প্রতি বছর ২৫নভেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা শুরু হয়, যেটি ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে শেষ হয়।

জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, সরকারি কর্মকর্তা এবং কমিউনিটি নেতাসহ সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

পুরো পৃথিবী এবং বাংলাদেশ জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী সচেতনতা ও প্রথা তৈরিতে মানুষ কাজ করছে যা এই অভিশাপ থেকে মুক্তির পূর্বশর্ত।

বৈশ্বিক পর্যায়ে, আমরা যে দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করি- ভুটান, ব্রাজিল, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্র; এসব দেশ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (এসডিজি) সামনে রেখে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছে।

এসডিজি পরস্পর সম্পর্কিত লিঙ্গসমতা এবং নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নে জোর দেয়। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই দৃষ্টিপাত করতে হবে, যদি আমরা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে চাই।  এখন বাস্তবায়নের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

এ প্রচেষ্টায় অন্যান্য সরকার, বেসকারি খাত এবং বিশেষ করে সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নিতে পারি।  ভুক্তভোগীদের কথা শুনে এবং তাদের বিশ্বাস করে আমরা সহায়তা করতে পারি।

পুরুষ ও ছেলেদের শেখাতে পারি যেন তারা নারী ও মেয়েদের সহযোগিতা করে এবং তাদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়।

দেশে এবং বিদেশে আমাদের সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে থাকে। ‍ নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে শিক্ষা দেন যেন আইনি সহায়তা বাড়ানো যায়; সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ দেয় যেন তারা ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনগুলোকে ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারে এবং বিচার ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে পারে।

আমরা সেসব প্রকল্পে অনুদান দেই যেসব প্রকল্প ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও কারিগরি শিক্ষা দেয়; ধর্মীয়, ব্যবসায়িক এবং সামাজিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করি যেন নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা যায়।

আমরা এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হয়েছি কারণ আরও একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত-  শুধুমাত্র সমষ্টিগত পদক্ষেপের মাধ্যমেই নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব।

যৌথ নিবন্ধে স্বাক্ষরকারীরা হলেন-ঢাকায় নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত মিস পেমা শোডেন, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত মিস ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নব্রেগা ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিস হ্যান ফুগল এস্কেয়ার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিস সোফি অবেয়ার, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার ম্যাডাম নোরলিন বিন্তি ওসমান, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মিস লিওনি মার্গারিটা কুয়েলেনায়ের, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিস মেরেটে লুন্ডিমো, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকেরা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট।
ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.