আমরা কারো কাছে হার মানি না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার চেতনায় চালিত হলে সম্পদের সীমাবদ্ধতা কোনো বাধা হতে পারে না। বাংলাদেশ আস্থার সঙ্গে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বে মর্যাদার স্থান করে নেবে। এ দেশ তার জাতীয় বাজেটের ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন করে নিজস্ব সম্পদে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সব সময় এ কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কখনো কারো কাছে হার মানি না, পরাজয় স্বীকার করি না। বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের এ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে (বিএএফ) ছয়টি উন্নত প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এবং দুটি আধুনিক গবেষণা ও উদ্ধার হেলিকপ্টার সংযোজন উপলক্ষে গতকাল রবিবার কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি অনুষ্ঠানে
ওয়াইএকে-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এবং এডাব্লিউ১৩৯ নৌ গবেষণা ও উদ্ধার হেলিকপ্টার চালুর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে এক দর্শনীয় কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এডাব্লিউ১৩৯ হেলিকপ্টারের সংযোজন আদেশের অফিসার কমান্ডিং বিএএফ উইং কমান্ডার এম আব্বাস আলীর কাছে এবং ওয়াইএকে-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের সংযোজন আদেশের অফিসার কমান্ডিং বিএএফ উইং কমান্ডার হাসান আশরাফুজ্জামানের কাছে হস্তান্তর করেন।
কুচকাওয়াজের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারের সামগ্রিক কার্যক্রম ও নতুন সংযোজিত প্রশিক্ষণ বিমানের স্ট্যাটিক ডিসপ্লেও প্রত্যক্ষ করেন।
তীব্র গতিতে আকাশে উড়ছিল একটি যুদ্ধবিমান। হঠাৎই মধ্য আকাশে প্রায় থেমে গিয়ে কম গতিতে চলতে শুরু করে। একপর্যায়ে বিমানটি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে আবার দ্রুত নিচে নেমে আসে। অনেকটা নাচের ভঙ্গিতেই যেন চলছিল বিমানটি। নিচে দাঁড়িয়ে বিমানটির উড্ডয়ন প্রদর্শনী দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান এবং বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা। সকাল ১১টার দিকে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটির মাঝামাঝি তৈরি করা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রদর্শনী দেখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রদর্শনী ঘোষণার পরপরই সবার দৃষ্টি যায় আকাশের দিকে। এরই মধ্যে মঞ্চের ডান দিকের আকাশে দেখা মেলে ওয়াইএকে-১৩০ বিমানের। বিমানটি প্রথমে দ্রুত গতিতে মঞ্চ পেরিয়ে চলে যায়। এর পর ফিরে এসে আকাশে উল্টো ঘুরে সবার হাততালি কুড়ায়। একপর্যায়ে মঞ্চের ডান দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে উড়ে আসে বিমানটি। মঞ্চের কাছাকাছি এসে যেন থেমে গিয়ে কম গতিতে চলতে শুরু করে। পরে বিমানটিকে উল্টোভাবে উড়িয়ে নিয়ে চলেন বৈমানিক।
প্রদর্শনীর সময় জানানো হয়, রাশিয়ায় তৈরি ফোর্থ প্লাস প্রজন্মের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওয়াইএকে-১৩০-এর সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড নেভিগেশন সিস্টেম, অ্যাটাক সিস্টেম ও ডিজিটাল ফ্লাই-বাই-ওয়ার ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম সজ্জিত রয়েছে। বিমানটি অন্য বিমানকে ধাওয়া করতে পারে। স্বল্প দূরত্বের মধ্যে গতি পরিবর্তনে সক্ষম। আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শত্রু বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম। ৬০০ কিলোমিটার বেগ থেকে হঠাৎই বিমানটি ২০০ কিলোমিটার বেগে চলে আসতে পারে। ফলে শত্রু বিমান এ বিমানকে রেখে সামনে চলে যেতে বাধ্য হবে। এ পরিস্থিতিতে এই বিমান শত্রু বিমানটিকে ভূপাতিত করতে পারবে। ইতালির অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড এডাব্লিউ১৩৯ হেলিকপ্টারের বৈশিষ্ট্য হলো পূর্ণাঙ্গ ইন্টিগ্রেটেড এভয়নিক্স সিস্টেম ও চার এক্সিস ডিজিটাল অটো ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমসহ উন্নত প্রযুক্তির সন্নিবেশ। নৌ গবেষণা ও উদ্ধার অভিযানের জন্য হেলিকপ্টারটিতে উচ্চপ্রযুক্তির ফরোয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড সিস্টেম, ডাইরেকশন ফাইন্ডার, সার্চ লাইট, হইস্ট কিট, ফ্লোট কিট ও অগুমেনটেড হোভার মুড সজ্জিত রয়েছে। অটো পাইলট প্রযুক্তি সংবলিত হেলিকপ্টার অগাস্টা এডাব্লিউ-১৩৯ প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উপকূল ও সমুদ্র এলাকায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া উপকূল ও সমুদ্রসীমায় সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীকে কৌশলগত সহায়তাও দিতে পারে এই হেলিকপ্টার।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু আসরার ও বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটির কমান্ডার এয়ার কমোডর এম ওবায়দুর রহমান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, নৌবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষাসচিব, কূটনীতিক এবং জ্যেষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, বিমানবাহিনীতে শিগগিরই পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার এবং ১২টি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান যুক্ত হবে।