সংবাদ শিরোনামসব সংবাদস্পটলাইট

ঢাকার পরিবহন নিয়ে উদ্বেগ

02ঢাকার রাস্তায় এখন অটোরিকশা থেকে শুরু করে প্রাইভেট কার, বাস, কাভার্ড ভ্যানসহ আরো বহু যানে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে ঘনীভূত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজি। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এটা অনেকটা নিরাপদ—এমন ধারণা থেকেই কয়েক বছর আগে সিএনজির ব্যবহার শুরু হয়। যা এখন ঢাকা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামসহ আরো কয়েকটি শহরে পৌঁছে গেছে। ব্যবহারও বাড়ছে। এত কিছুর পরও ঢাকার পরিবহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া নিয়ে উদ্বেগের প্রকাশ ঘটল সুদূর প্যারিসের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে। সবচেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী বিশ্বের ২০টি দেশের মধ্যে ১৬ নম্বরে আছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে কেবল ডিজেলচালিত পরিবহন থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ার ক্যাটাগরিতে এক নম্বরে আছে ঢাকার নাম।

ঢাকাকে ডিজেলদূষণ থেকে রক্ষার জন্য কী কার্যক্রম নেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে শহরের বাইরে বাসাবাড়িতে জ্বালানি কাঠ বা অন্যান্য উপকরণ থেকে নির্গত ধোঁয়াও মারাত্মক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে দেশের নারী ও শিশুদের।

এদিকে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী এমন বায়ুদূষণের কবলে পড়ে বছরে ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে। তবে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনার মাধ্যমে বছরে অকালমৃত্যু কমিয়ে ৩৫ লাখে আটকে রাখা যাবে ২০৩০ সালের মধ্যেই।

গাড়ির কালো ধোঁয়া : শুক্রবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের ৩ নম্বর জোনে ১৩ নম্বর প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক অধিবেশনে বায়ুদূষণ কবলিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিষয়গুলোও উঠে আসে।

অধিবেশনে দ্য ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশন-আইসিসিটির নির্বাহী পরিচালক ড্রিউ কোজাক ডিজেলচালিত পরিবহন থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নানা দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি কেরোসিনে ক্ষতির বিষয় তুলে ধরেন।

পরে জানতে চাইলে আইসিসিটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ডিজেলের চেয়ে সিএনজি কম ক্ষতিকর, তবে কোনোভাবেই এটাকে পুরোপুরি নিরাপদ বলা যাবে না। ডিজেলের কালো ধোঁয়া সহজে চোখে পড়ে বলে আমাদের উদ্বেগ বেশি হয়। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সিএনজি অবশ্যই একটি গ্যাস। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে।’

ড্রিউ কোজাক বলেন, কার্বন নির্গমন কমাতে সব শহরেই নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। কেবল পরিবহন বাড়িয়ে মানুষকে চলাচলের সুবিধা করে দিলেই হবে না।

ঢাকা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা বেশি কালো কার্বন নির্গমনকারী ২০টি দেশকে বেছে নিয়েছি দূষণমুক্ত করার ক্ষেত্রে। এর মধ্য অবশ্য ঢাকা আছে। এই দেশগুলোকে তিনটি ধাপে ভাগ করেছি। সেখানে দেখা গেল তৃতীয় ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশকে এক নম্বরে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে কালো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য।’

চুলার ধোঁয়া : একইভাবে রান্নার চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়াকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করে আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নামটিও বারবার উচ্চারণ করলেন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ক্লিন কুকস্টোভস-জিএসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাধা মুথিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণা অনুসারে, ২৫ শতাংশ রান্নার চুলা থেকেই বিষাক্ত কালো কার্বন নির্গত হয়। এ ক্ষেত্রে আরো কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশেও জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়া নারী ও শিশুদের জীবনের জন্য মারাত্মক বিপদ বহন করছে। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ফুসফুসের নানা রোগ বেড়ে গেছে। কিন্তু নিরাপদ রান্নার উপকরণ নিয়ে এসব দেশে এখনো তেমন কোনো চিন্তা দেখা যাচ্ছে না।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধ বিভাগের সমন্বয়কারী ড. কার্লোস ডোরা বলেন, কার্বন নির্গমন থেকে পরিবেশ বা বায়ুদূষণের ফলে সবার আগে ক্ষতি হয় জনস্বাস্থ্যের। এর পাশাপাশি একই ধরনের দূষণ থেকে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে। ফসলাদি উত্পাদন কমে যায়। মানুষের মতো গবাদি পশুর ক্ষতিও কম নয়। এ ছাড়া গাছপালার ক্ষতি তো আছেই। এমনকি বাতাসের ধরন-ধারণ পর্যন্ত বিঘ্নিত হয়।

টেকনিক্যাল কমিটির সভা সম্পন্ন : গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে জলবায়ু সম্মেলনের টেকনিক্যাল কমিটির সভার সমাপ্তি ঘটার কথা। এ কমিটির সভার সূত্র ধরেই কার্যকরী কমিটির বাকি গতি প্রকৃতি নির্ধারণ হয়ে থাকে। এ ছাড়া শুক্রবার বিদায়ী এডিপি থেকে গৃহীত প্রস্তাবনার ২৪ পৃষ্ঠার খসড়া দলিলপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মূল কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে; এরপর যা নিয়ে শুরু হবে পর্যালোচনা প্রক্রিয়া। এ ছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমানো, তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমানো, অর্থায়ন নিয়ে পর্যালোচনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গতকাল আয়োজকদের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়। এদিকে অর্থায়নের ক্ষেত্র উন্নত-অনুন্নত কোনো ভেদাভেদ না রাখা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলো। এখন যা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক।

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক : বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদল গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছে। দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কাটানোর জন্য অনান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে সাধুবাদ জানিয়ে জলবায়ু চুক্তি প্রণয়নে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

বৈঠক দুটিতে উপস্থিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘আমরা দুই দেশকে বলেছি তারা যেন আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটাতে সম্ভাব্য আর্থিক ও কারিগরিসহ সব ধরনের সহায়তা করে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে এককভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন।’

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.