সাকা-মুজাহিদের রায় নিয়ে এবার হিউম্যান রাইটসের বিতর্কিত মন্তব্য
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের দণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদ। ১৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এর ফলে এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এর আগে ২৭ অক্টোবর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাকা-মুজাহিদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছিল সংগঠনটি।
শুক্রবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন,‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে যে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিচার ও দায় গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে। অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ায় প্রকৃত বিচার করতে পারে না, বিশেষ করে যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, মুজাহিদ-সাকার মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক আদালতের আগের মামলার মতোই ত্রুটিপূর্ণ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে দ্রুত প্রণীত আইনের মাধ্যমে, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। আদালত প্রাঙ্গন থেকে মামলার বিবাদীর প্রধান সাক্ষীকে সরকারি বাহিনীর হাতে অপহরণের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়ার পরও মানবতাবিরোধী অপরাধে আরেক অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের আদেশ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য প্রমাণের স্বল্পতা এবং রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষীর অসঙ্গতিপূর্ণ বিবৃতি সত্ত্বেও ২০১৫ সালের এপ্রিলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় মুদাম্মদ কামারুজ্জামানকে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, মুজাহিদ ও সাকার বিচার প্রক্রিয়ায়ও একই অভিযোগ রয়েছে- প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও দলিলপত্রাদির স্বল্পতা। মুজাহিদের আইনজীবী তার পক্ষে ১৫০০ সাক্ষীর নাম দিয়েছিলেন। আদালত অবশ্য যৌক্তিকভাবেই ১৫০০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে মাত্র তিনজনকে মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তার অনুগতদের নিপীড়নে প্ররোচিত করার অভিযোগে। অথচ তার অনুগতদের কোনো সাক্ষ্যই গ্রহণ করা হয়নি। রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরপরই বাড়িতে পুলিশি অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মুজাহিদের এক আইনজীবী লুকাতে বাধ্য হয়েছে।
সাকা চৌধুরীর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশে ছিলেন-এমন সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল আদালত। এ ছাড়া সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে ৪১ জন সাক্ষ্য দিতে চাইলেও আদালত চারজনকে অনুমতি দিয়েছিল।
ব্র্যাড অ্যাডামস দাবি করেন, সাকা-মুজাহিদের বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি।