নাইকো দুর্নীতি মামলা দেশে এসেই আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন খালেদা
ঢাকা : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন, এ মামলার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে চলবে এবং রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
গত ১৮ জুন নাইকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের কপি ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এসে পৌঁছালে পরদিন ওই আদালতের বিচারক ৩০ নভেম্বর মামলাটির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
যেহেতু হাইকোর্টের রায় এবং ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামী ৩০ নভেম্বর দুই মাস সময় অতিক্রান্ত হবে, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, যুক্তরাজ্যে থাকা খালেদা জিয়া আগামী ৩০ নভেম্বর সত্যিই আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন কি না।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি খালেদা জিয়া ৩০ নভেম্বরের আগে দেশে আসেন, তাহলে তিনি অবশ্যই ওই আদালতে থাকবেন ইনশাল্লাহ।’
খালেদা জিয়া ৩০ নভেম্বরের আগে দেশে ফিরবেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন কি না? এ প্রশ্নে অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া বলেন, ‘আমিতো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না এ মুহূর্তে। এটি অনিশ্চিত (আনসার্টেন)।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা দারে করা হয়। যেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বেগম জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন।
এ মামলায় ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়।
পরে এ মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। এ রুলের উপর হাইকোর্টে গত ১৯ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ২৮ মে। এরপর আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এরপর ১৮ জুন রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এদের মধ্যে সেলিম ভুঁইয়া নাইকোর কাছ থেকে কাশেম শরীফের মাধ্যমে তিন কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করেন। সে সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে নাইকোর কাছ থেকে একটি গাড়ি উপহার নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।