সংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বদলে গেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ জমা রাখার নিয়ম

01বদলে গেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ জমা রাখার নিয়ম। এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ফান্ডে মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ জমা রাখতে পারবেন। এর আগে চাকরিজীবীরা চাইলে মূল বেতনের পুরোটাই ওই ফান্ডে জমা রাখতে পারতেন।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ইস্যু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা এখন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেসিক বেতনের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ জমা রাখতে পারবেন, যা চলতি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেসিক বেতনের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ জমা রাখার বিধান থাকলেও সর্বোচ্চ কোনো সীমা ছিল না। ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখতে পারতেন। এমনকি কেউ কেউ বেসিক বেতনের পুরোটাই ওই ফান্ডে জমা রাখতেন।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এ ফান্ডে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এই ফান্ডে সরকার সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ প্রদান করে থাকে, যা বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাতে সরকারি বরাদ্দ করেছে ২১০০ কোটি টাকা, যেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৯০০ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় খাতটির দায় বাড়লেও আয় বাড়ছে না। তা ছাড়া, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সরকারকে এ ফান্ডসহ পেনশন খাতে ব্যয় বাড়ায় আর্থিক ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে। সংস্থাটি মনে করে, এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মোট অংশগ্রহণ ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ওই বছর সরকার এ অর্থের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের এত অর্থ জমা হলেও কখনো বিনিয়োগ করে না সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেও তা মানছে না অর্থ বিভাগ। যুগের পর যুগ এ টাকা সরকারি হিসাবে অলস পড়ে আছে। তাই সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিশাল পরিমাণ অর্থ অলসভাবে পড়ে থাকায় জাতীয় অর্থনীতিতে এটি কোনো অবদান রাখতে পারছে না। এতে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে সরকার।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, অনেক অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে যারা দীর্ঘদিন প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেতনের পুরোটায় রেখে দেন। কারণ তারা বেতনের বাইরে ভিন্ন পথে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। ফলে বেতন না তুললেও বেশ ভালোভাবেই সংসার পরিচালনা করতে পারেন। এ ছাড়া এমনও পরিবার রয়েছে যাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আয় করেন। সে ক্ষেত্রে একজনের বেতনের পুরোটাই প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখেন। কেননা বাইরে যেকোনো ব্যাংকে সঞ্চয় করলেও সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায় না। তাই এই ফান্ডে অর্থ জমা রাখা অধিক লাভজনক ও নিরাপদ মনে করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তাই সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৩ নং অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড আইন, ১৯৭৯ এর ধারা ৯ এর উপধারা (১)(বি)-এ নতুন এই ধারা প্রতিস্থাপিত হবে। ওই ধারা অনুযায়ী এখন থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেসিক বেতনের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ জমা রাখতে পারবেন।

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.