সমাজভিত্তিক সংগঠনসমূহের জাতীয় সম্মেলনে১৬ দফা ঘোষণা
সমাজভিত্তিক সংগঠনসমূহের জাতীয় সম্মেলনে ১৬ দফা ঘোষণা
হাওর, চর ও উপকুল এলাকার মানুষের অধিকার আদায়ের দাবী
ঢাকা, ০৫ নভেম্বর ২০১৫: দেশের সুনির্দিষ্ট প্রত্যন্ত এলাকা যেমন হাওর, চর ও উপকুল এলাকায় বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রাপ্তিতে বিশেষ এলাকা ভিত্তিক জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, কৃষিখাতের সাথে যুক্ত নারীদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সাথে নারী বান্ধব কৃষি ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, শিশুদের বিদ্যালয় গমন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যুবসমাজের জন্য সময়োপযোগী আয়মূলক কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত, চর, হাওড় ও উপকূলের উন্নয়নে সার্বক্ষণিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাওর ফাউন্ডেশনকে কার্যকর করা, তৃণমূল জনগণের অধিকার রক্ষাসহ ১৬ দফা ঘোষণা গ্রহণের মাধ্যমে দুইদিনব্যাপী ‘সমাজভিত্তিক সংগঠনসমূহের জাতীয় সম্মেলন ২০১৫’ সমাপ্ত হয়েছে আজ। উল্লেখ্য গতকাল জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি এই কনভেনশনের উদ্বোধন করেন।
কৃষিবিদ ইন্সষ্টিটিউশন কমপ্লেক্স, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার জনাব ফজলে রাব্বী মিয়া, এমপি। তিনি বলেন, অক্সফ্যাম ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টায় তৃণমূলে এতো বিশালসংখ্যক সমাজভিত্তিক সংগঠন গড়ে উঠেছে তা ঠিকভাবে কাজ করছে আমাদের দেশ ১৯৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের কাতারে চলে যেতে পারবে। সমাজভিত্তিক সংগঠনের দাবীগুলোকে যৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি এগুলোর নিয়ে সরকারের কাছে পেশ করতে অক্সফ্যামসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের রবীন্দ্রনাথ সরেণ। সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব ¯েœহাল ভি. সোনেজী। ভি. সোনেজী। এর আগে সকাল থেকে ৩টি ভেন্যুতে পরিকল্পনা প্রস্তুত সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেশনে সংসদের কয়েকটি স্টান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, একাধিক সংসদ সদস্য, সমবায় অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণীসম্পদ অধিপ্তরের মহাপরিচালক, নাগরিক সমাজের পক্ষে এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, শাহীন আনাম, ড. ইব্রাহীম খালেদ, মুস্তাফা জব্বারসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠিার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। এসব আলোচনার ভিতর থেকে ১৬ দফা সম্বলিত ঘোষণা চ’ড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
দেশের সুনির্দিষ্ট প্রত্যন্ত এলাকা যেমন হাওর, চর ও উপকুল এলাকায় বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষের অধিকার প্রাপ্তিতে বিশেষ জাতীয় পর্যায়ে এলাকা ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বিশেষ বাজেট বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
দেশের দূর্গম ও মূল-ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা তৃণমূল গণসংগঠণসমূহকে সরকারী নিবন্ধনের আওতায় নেয়া ও আয়মুলক কাজের জন্য আর্থিক সুবিধার শর্তসমূহ সহজ করা ও প্রাপ্তি সহজলভ্য করা।
নারীদের উৎপাদিত পণ্যর লাভজনক মুল্য সহ নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী ও ব্যক্তিখাত থেকে প্রয়োজনীয় প্রনোদনা প্রদান করা, নতুন বাজার সৃষ্টি করা, এবং নীতি ও বাজার মনিটরিং নিশ্চিত করা।
কৃষিখাতের সাথে যুক্ত নারীদের কৃষক হিসেবে সরকারী সহাযোগিতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নারীর সক্ষমতা ও সুযোগ বৃদ্ধি করা।
নারী বান্ধব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা আরও বৃদ্ধি করা। এ বিষয়ে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান অব্যাহত রাখা ও বাস্তবায়ন করা।
কৃষি উৎপাদন, গবাদি পশুপালন ও মৎস্যচাষকে উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং প্রাণিসম্পদ সুরক্ষায় কৃষকের নিকটবর্তী স্থানে সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা।
আর্সেনিকের মাত্রা নিরসণ এবং সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। দূর্গম ও মূল-ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের সুবিধা নিশ্চিত করা।
শিশুদের বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা করা, দুরবর্তী স্কুলে যাতায়াতের জন্য নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করা।
খাসজমি-জলা-জঙ্গলে প্রান্তিক ও ভুমিহীন কৃষকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। বর্গাচাষীদের জমি বন্টনের ক্ষেত্রে নারী কৃষকদেরকে প্রাধান্য দেওয়া।
জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ইজারা প্রথায় জেলেদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তৃণমূল জনগণের অধিকার-কর্তৃত্ব-মর্যাদা রক্ষায় বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে সুশাসন কায়েম করা।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন ঘোষণা করা, তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন কর্মসূচীর দুর্নীতি ও সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।