ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে গণ শুনানী
বাস স্টপেজে নির্ধারিত ভাড়ার সরকারি তালিকা ঝুলানোর দাবী
গ্যাস ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনে চলমান ভাড়া নৈরাজ্যরোধে প্রত্যেক বাস স্টপেজে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বিলবোর্ড আকারে টাঙানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ আবুল মকসুদ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার দুপুরে গণপরিবহনে চলমান ভাড়া নৈরাজ্য বিষয়ক গণশুনানি চলাকালে সরকারের কাছে এ দাবি জানান তিনি। সকাল থেকে বাসের সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের অভিযোগ শুনেছেন বিশিষ্ট জনেরা ।
গণশুনানিতে বাস ভাড়া নিয়ে অভিযোগ করেন হেনা বেগম। তিনি এয়ারপোর্ট থেকে পল্টন এসেছেন। তার কাছ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আগে তিনি একই রুটে একই জায়গায় আসতেন ২৫ টাকায়। অভিযোগ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল, চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থী নাজমুলের অভিযোগ, ‘ছাত্রদের বাসে তোলা হয় না। এতে বিকেলে তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘১০ দিন যাবত সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার অযৌক্তিকভাবে যতটুকু ভাড়া বাড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি ভাড়া পরিবহনগুলোতে আদায় করা হচ্ছে। আগে যাদের মাসে দেড় হাজার টাকা পরিবহন খরচ হতো এখন তাদের আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এতে করে স্বল্পবিত্ত ও শ্রমিকশ্রেণীর জীবন-যাপন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।’
গণপরিবহনে চলমান ভাড়া নৈরাজ্যরোধে প্রত্যেক বাস স্টপেজে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বিলবোর্ড আকারে টাঙানোর দাবি জানান তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মুহম্মদ বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানোর কারণেই এ ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সরকার যে পরিমাণ ভাড়া বাড়িয়েছে তার চেয় বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। এর কারণ বেশির ভাগ বাসের মালিক সরকার সংশ্লিষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি গণপরিবহনগুলোতে বাসের হেলপারদের কাছ থেকে নারী ও শিক্ষার্থী বিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কি নারী ও শিক্ষার্থীরা বাসে উঠবে না। এটা সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে হচ্ছে। এ সব থামানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক বাস স্টপেজে সরকার নির্ধারিত ভাড়া টাঙাতে হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণপরিবহনে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ আসছে। এটা কাম্য নয়। অনেক জায়গায় মোবাইল কোর্টের ওপরও হামলা হচ্ছে। গাড়ি বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’
নৈরাজ্যরোধে সরকারের কাছে তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া অযৌক্তিকভাবে গ্যাস ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আদালতে যাওয়ারও চিন্তার কথা জানিয়েছেন গণশুনানিতে অংশ নেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যন ড. গোলাম রহমান ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি( সিপিবি) র কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, অভিযোগ করে বলেন সরকার আগেই বাস ভাড়া বেশি নির্ধারণ করেছিল । তাছাড়া যে সব যুক্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তা যুক্তিযুক্ত নয় । যেমন ২০ শতাংশ সিট খালি থাকার কথা বলা হয় অথচ সব বাসে নির্ধারিত সিটের থেকে বেশী সিট বানান হয়, যাত্রীরা তো দাড়িয়েই থাকেন ।
তিনি যাত্রী প্রতিনিধি সহ গন শুনানীর মাধ্যমে ভাড়া পুন নির্ধারণ ও কঠোর হাতে নৈরাজ্য দমনের আহ্বান জানান ।
তিনি সরকারকে মালিক বান্ধব না হয়ে যাত্রী বান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, শরীফ রফিকুজ্জামান, গ্রীন ভেয়েসের হুমায়ুন কবির সুমন বক্তব্য রাখেন ।