‘দেশে ডেমোক্রেসি নেই, আছে ইডিওক্রেসি’
‘এখনও প্রগতিশীল ব্লগারদের খুন হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ নেই। ইঁদুরের মতো সবাই গর্তে লুকিয়ে পড়েছে। যাদের সচেতন শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী বলে মনে করা হয়, তারাও। স্টুপিড সরকার দেশের জনগণকেও ছলে বলে কৌশলে স্টুপিড বানিয়েছে। ডিমোক্রেসি নেই বাংলাদেশে, যা আছে তার নাম ইডিওক্রেসি।’
তসলিমা নাসরিন: একজন জন ব্লগার থ্রেট খায়, ১০ জন ব্লগার ব্লগ গুটিয়ে ফেলে। একজন জন ব্লগার কোপ খায়, ১০০ জন ব্লগার ব্লগ লেখা বন্ধ করে দেয়। এরকমই মনে হচ্ছে। এভাবেই বাঙালির অতি স্বল্প আয়ুর যুক্তিবাদের যুগ বা এজ অব রিজনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
ব্লগারদের পাশে দেশের শিল্পী সাহিত্যিক, দেশের বিজ্ঞানী বুদ্ধিজীবী কেউ নেই। এসব দেখে মনে পড়ছে ২২ বছর আগে আমার পাশেও খুব বেশি কেউ ছিল না। অলমোস্ট একা আমি ভারসেস গোটা দেশ ইনক্লুডিং অপদার্থ সরকার।
লক্ষ মৌলবাদী পথে, আমার মুণ্ডুর জন্য উন্মাদ হয়ে উঠছে। কোথায় আমার পাশে দাঁড়াবে সরকার, তা নয় আমার বিরুদ্ধেই কেস দিয়ে বসলো। তখন আইটি অ্যাক্ট ছিল না, তখন পিনাল কোডের ২৯৫ এ-ই সাহসী লেখককে মেরে ফেলার জন্য যখেষ্ট।
হাতে গোণা কিছু বুদ্ধিজীবী গোপনে গোপনে অবশ্য ছিল পাশে। ওরকম থাকায় লাভ কিছু হয় না। যদি দেশ জুড়ে বিক্ষোভ হতো ইসলামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, আমার বাক স্বাধীনতার পক্ষে যদি অন্তত পাঁচশ লোকও দাঁড়াতো, তাহলে কারও সাধ্য ছিল না আমাকে দেশ থেকে তখন বের করে। সেই দু’যুগ আগের ঘটনাকেই যেন পূনরায় ঘটতে দেখছি এখন। এখনও প্রগতিশীল ব্লগারদের খুন হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ নেই। ইঁদুরের মতো সবাই গর্তে লুকিয়ে পড়েছে।
যাদের সচেতন শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী বলে মনে করা হয়, তারাও। স্টুপিড সরকার দেশের জনগণকেও ছলে বলে কৌশলে স্টুপিড বানিয়েছে। ডিমোক্রেসি নেই বাংলাদেশে, যা আছে তার নাম ইডিওক্রেসি।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১১, ২০১৫।