দিনে রাজপথ, রাতে মুক্তিভবন, তারপর কী?
এতো কিছুর পরেও ন্যায্য পাওনা মিলবে কিনা সেই ভরসা খুঁজছিলেন রোকন, তরিকুল, রহিমা ও কহিনূর। অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে রাতে মুক্তিভবনে আশ্রয় হয়েছে তাদেরও।
শুধু এ ক’জন শ্রমিকই নন, প্রায় সবার মনেই অজানা আতঙ্ক পাওনা মিলবে কিনা! এই আতঙ্ক নিয়েই আবারও রোববার (১৯ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেক্লাবের সামনে আন্দোলনে যোগ দিতে হবে তাদের। আর রাতে এসে আশ্রয় নিতে হবে মুক্তিভবনে।
ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার ভরসা থাকলেও তা মেলেনি। আন্দোলন করেও টাকা পাওয়া যায়নি। এখন শঙ্কা এরপর কি হবে তাদের? কিভাবে বাড়ি ফিরবেন তারা? কিছুই জানা নেই!
ঈদের দিন শনিবার (১৮ জুলাই) রাতে মুক্তিভবনে কথা হয় সোয়ান গার্মেন্টের এসব শ্রমিকদের সঙ্গে। ওই সময় বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের দু-একজন কর্মী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজনকে দেখা গেছে শ্রমিকদের পাশে।
এর আগে গত ১২ জুলাই সকাল থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় শ্রমিকরা। ঈদের আগে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাসের আশায় টানা অবরোধে যোগ দেয় প্রায় ৪০০ শ্রমিক। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়নের ব্যানারে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
তাদের দাবি ছিল সোয়ান গার্মেন্টের ১৩০০ শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাস ঈদের আগেই পরিশোধ করা এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া। অন্যথায় শ্রমিকরা বাসায় ফিরে যাবে না। এমনকি ঈদের দিনেও তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ঈদ করবে রাজপথে।
ঘোষণা অনুযায়ী সত্যিই শ্রমিকদের ঈদ করতে হয় রাজপথে। আন্দালন করতে গিয়ে মিনতি নামে এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আর ঈদের আগেই ঘরছাড়া হয়েছেন আরেক শ্রমিক হজরত। ঈদের আগে বাসাভাড়া দিতে না পারায় হজরত ও তার স্ত্রীকে মার-ধর করে বাসা থেকে বের করে দেন বাসামালিক।
ঘর ভাঙার আতঙ্ক নিয়ে পাওনার আশায় আন্দোলন ছেড়ে যাননি মনি বেগম। মনি বেগম আশুলিয়া হাজী ক্যাম্পের কাছে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন স্বামী-সন্তান নিয়ে। পাওনা আদায়ের আন্দোলনে যোগ দিয়ে পাঁচদিন পরেও টাকা না পাওয়ায় স্বামী মোকছেদুল তাকে বলে দিয়েছে- ট্যাকা প্যাসনি, তোরে তালাক দিমু।
ঈদের দিন মুক্তিভবনে গিয়ে দেখা গেছে- সামান্য ভালো খাবার পেয়ে শ্রমিকরা খুশি। তবে অজানা আতঙ্ক রয়েছে সবার মাঝে। এর পর কী হবে? শ্রমিকরা জানতে চাইছেন নেতাদের কাছে।
জামালপুর গজারিয়ার মো. রোকন, দিকপাইকের তরিকুল ইসলাম, মেলান্দের রহিমা বেগম এবং বগুডার উত্তর আটটঘোরিয়ার কহিনূর সবারই অজানা তাদের কী হবে? তবে তাদের আশ্বস্ত করেছেন শ্রমিক নেতারা পাওনা মিলবে।
শ্রমিকরা জানান, আন্দোলন করে টাকা নিয়েই ঘরে ফিরবো।
শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিন বলেন, শ্রমিকের বেতন-বোনাস না দেওয়া হলে ঈদের পর সারা দেশের শ্রমিকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবো। আন্দোলনের পাশপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব বেতন-বোনাসের জন্য।
সোয়ান শ্রমিকদের ঈদ
দিনভর আন্দোলন এবং দপুরের খাবার পেয়ে খুশি হয়েছেন শ্রমিকরা। দুপুরে মুরগির মাংস ও খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে তাদের। আর রাতে আলু ভর্তা ডাল আর গরম ভাত। এই সাত দিনের মধ্যে ঈদের দিনের খাবারকেই ভালো বলছেন তারা। কারণ এর আগে বেশিরভাগ রাতেই জুটেছে নরম খিচুড়ি। সন্ধ্যায় ইফতারে জুটেছে ছোলা-মুড়ি।
শ্রমিকরা জানান, কখনও নিজেরা চাঁদা তুলে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তারা। তবে বেশিরভাগ দিনই গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের সুভাকাঙ্খীদের সহায়তা নিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর পার্টি অফিস ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে নিজেদের লোক মনে করেই।